মানুষের জীবনে দুঃখ, দুশ্চিন্তা ও অশান্তির ভিড়ে শান্তির খোঁজ যেন এক দুর্লভ সম্পদ। ইসলাম আমাদেরকে এমন কিছু দোয়া ও আমল শিখিয়েছে, যা নিয়মিত পালন করলে অন্তরে নেমে আসে স্বস্তি, মস্তিষ্কে আসে প্রশান্তি, আর জীবনে ফিরে আসে ভারসাম্য। নিচে তেমনই কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাসনুন দোয়া ও করণীয় উল্লেখ করা হলো, যা জীবনকে শান্তিময় করে তুলতে পারে ইনশাআল্লাহ।
১. দুঃখ-অশান্তি দূর করার দোয়া
প্রিয়নবী (স.) এই দোয়াটি পড়তে শিখিয়েছেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي عَبْدُكَ، ابْنُ عَبْدِكَ، ابْنُ أَمَتِكَ، نَاصِيَتِي بِيَدِكَ، مَاضٍ فِيَّ حُكْمُكَ، عَدْلٌ فِيَّ قَضَاؤُكَ، أَسْأَلُكَ بِكُلِّ اسْمٍ هُوَ لَكَ، سَمَّيْتَ بِهِ نَفْسَكَ، أَوْ أَنْزَلْتَهُ فِي كِتَابِكَ، أَوْ عَلَّمْتَهُ أَحَدًا مِنْ خَلْقِكَ، أَوِ اسْتَأْثَرْتَ بِهِ فِي عِلْمِ الْغَيْبِ عِنْدَكَ، أَنْ تَجْعَلَ الْقُرْآنَ رَبِيعَ قَلْبِي، وَنُورَ صَدْرِي، وَجِلَاءَ حُزْنِي، وَذَهَابَ هَمِّي
উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আবদুকা, ইবনু আবদিকা, ইবনু আমাতিকা, নাসিয়াতি বিইয়াদিকা, মাদিন ফিয়া হুকমুকা, আদলুন ফিয়া কাদাউকা। আসআলুকা বিকুল্লিসমিন হুয়া লাকা, সাম্মাইতা বিহি নাফসাকা, আও আনজালতাহু ফি কিতাবিকা, আও আল্লামতাহু আহাদাম মিন খালকিকা, আবিসতা’সারতা বিহি ফি ইলমিল গায়বি ইন্দাকা, আন তাজ'আলাল কুরআনা রাবী'আ কালবি, ওয়া নুরা সাদরি, ওয়া জিলাআ হুজনি, ওয়া যাহাবা হাম্মি।’
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার বান্দা, তোমার বান্দার সন্তান, তোমার বাঁদীর সন্তান। আমার চুলের চিরুনি তোমার হাতে। আমার ব্যাপারে তোমার সিদ্ধান্ত কার্যকর, তোমার ফায়সালা ন্যায়সংগত। আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি তোমার প্রতিটি নামের দ্বারা, যা দিয়ে তুমি নিজেকে নামকরণ করেছ অথবা তোমার কিতাবে অবতীর্ণ করেছ অথবা তোমার কোনো সৃষ্টিকে শিখিয়েছ অথবা গায়েবের জ্ঞানে তোমার কাছে বিশেষভাবে রেখেছ—যে তুমি কোরআনকে আমার হৃদয়ের বসন্ত করো, আমার বক্ষের আলো করো, আমার দুঃখ মোচন করো এবং আমার চিন্তা দূর করো।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান: ৯৭২)
২. অস্থিরতা ও দুশ্চিন্তা দূর করার দোয়া
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ
উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়াল আজযি ওয়াল কাসালি, ওয়াল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া দালা'ইদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজাল।’
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অক্ষমতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের বোঝা ও মানুষের দাসত্ব থেকে।’ (সহিহ বুখারি: ৬৩৬৯)
৩. সকাল-সন্ধ্যায় পড়ার জিকির
প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় এই দোয়া পড়লে আল্লাহ শান্তি দেন- حَسْبِيَ اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ
উচ্চারণ: ‘হাসবিয়াল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়া, আলাইহি তাওয়াক্কালতু ওয়া হুয়া রাব্বুল আরশিল আজীম।’
অর্থ: ‘আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। আমি তাঁর উপরই ভরসা করি এবং তিনি মহান আরশের মালিক।’ (সুরা তাওবা: ১২৯)
৪. ঘুমানোর আগের দোয়া
ঘুমানোর আগে এই দোয়া পড়লে আল্লাহ শান্তি দেন ও দুশ্চিন্তা দূর করেন
اللَّهُمَّ بِاسْمِكَ أَمُوتُ وَأَحْيَا উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমূতু ওয়াহইয়া।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তোমার নামে আমি মৃত্যুবরণ করি এবং জীবন ধারণ করি।’ (সহিহ বুখারি: ৬৩২৪)
৫. সুরা ফাতেহা, ইখলাস ও আয়াতুল কুরসি
প্রতিদিন সুরা ফাতেহা, ইখলাস ও আয়াতুল কুরসি (সুরা বাকারা: ২৫৫) পড়লে আল্লাহ শান্তি দেন ও বিপদ দূর করেন। মূলত এগুলো তাওহিদের বিশুদ্ধতম ঘোষণা, যা অন্তরে প্রশান্তি আনে। অনেক বিশুদ্ধ হাদিসে এর দলিল রয়েছে।
৬. অধিক পরিমাণে ইস্তেগফার (ক্ষমা প্রার্থনা)
ইস্তেগফারের অনেক ভাষা রয়েছে। হাদিস থেকে যেকোনো বাক্যে ইস্তেগফার করতে পারেন। সংক্ষিপ্তভাবে أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الْعَظِيمَ ‘আস্তাগফিরুল্লাহাল আজিম’ অর্থ: ‘আমি মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।’ এই বলে ইস্তেগফার করতে পারেন। ইস্তেগফার করলে আল্লাহ অন্তরে শান্তি দেন। (সুরা নূহ: ১০-১২)
৭. ধৈর্য ধারণ ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা
وَاسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ অর্থ: ‘ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো।’ (সুরা বাকারা: ১৫৩)
৮. দুনিয়া ও আখেরাতের শান্তির দোয়া
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
উচ্চারণ: ‘রাব্বানা আতিনা ফিদ্ দুনইয়া হাসানাহ, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাহ, ওয়াকিনা আজাবান্নার।’
অর্থ: ‘হে আমার প্রভু! আমাকে দুনিয়াতে সুখ দান কর, আখেরাতেও সুখ দান কর এবং আমাকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও।’ (সুরা বাকারা: ২০১)
মাহাত্ম্য: দুনিয়ার সমস্ত হাসানাহ (সুস্থতা, সম্পদ, সন্তান, শান্তি) ও আখেরাতের নাজাত একসাথে চাওয়ার উত্তম দোয়া এটি। রাসুলুল্লাহ (স.) এটি প্রায়ই পড়তেন। (সহিহ বুখারি: ৬৩৮৯)
৯. সকাল-সন্ধ্যায় দরুদ শরিফ
প্রতিদিন দরুদ শরিফ পড়লে আল্লাহ অন্তরে প্রশান্তি দেন। নবীজি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করে, আল্লাহ তার ওপর ১০ বার রহমত নাজিল করেন।’ (সহিহ মুসলিম: ৪০৮)
জীবনে প্রশান্তি লাভে বিশেষ করণীয়
- নিয়মিত নামাজ পড়ুন এবং কোরআন তেলাওয়াত করুন, এ দুটি অন্তরে শান্তি আনে।
- নামাজ নিষ্ঠার সাথে পড়ুন, বিশেষভাবে তাহাজ্জুদ নামাজ।
- অধিক পরিমাণে দরুদ শরিফ পড়ুন, এটি দুঃখ দূর করে।
- দান-সদকা করুন, এটি বিপদ দূর করে।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শান্তি ও সফলতা দান করুন। আমিন।