মাদারীপুর প্রতিনিধি
মাদারীপুরে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে শ্রমিক দল নেতা শাকিল মুন্সী হত্যাকে কেন্দ্র করে বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষ লোকজনের বিরুদ্ধে। এসময় ৮-১০ টি বাড়ি লুটপাট করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেন তারা। মাদারীপুর পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের নতুন শহর এলাকায় পুরুষ শূন্য ও ফাঁকা বাড়িঘরে এ হামলা তান্ডব চালানো হয়। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন নারীরা। এর আগে গতকাল (৪ এপ্রিল) রাতের আধারে ঘরবাড়ি ভাংচুর করে কামরুল হাওলাদার সহ তার লোকজন। পরে আগুন দিয়ে ঘর পুড়িয়ে দেওয়ারও হুমকি দিয়েছিল বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। সেই হুমকির ঘটনাই বাস্তবে দেখালেন হামলাকারীরা।
স্বজন, স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মাদারীপুর পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আক্তার হাওলাদার এবং ১,২,৩ ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের সাবেক মহিলা কাউন্সিলর সাইদা সালমা দুজনেই ছিলেন সাবেক নৌ-পরিবহন ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান সমর্থিত। কিন্তু তারা একই নেতার অনুসারী হলেও দুইভাগে বিভক্ত ছিলেন। এজন্য তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন যাবত গ্রুপিং দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। এরই জের ধরে আওয়ামী লীগের পতনের পর বিএনপিতে যোগ দিতে মরিয়া হয়ে ওঠে উভয় পক্ষ। বিএনপি নেতা যাচ্চু হাওলাদারের সঙ্গে যোগ দেন সাইদা সালমা ও তার স্বামী লাভলু হাওলাদার। তবে আক্তার হাওলাদারের ভাই যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক লিটন হাওলাদারকে শ্রমিক দলে যোগদানে বাধা দেন সদর উপজেলা শ্রমিক দলের সভাপতি শাকিল মুন্সী। এ নিয়ে সংঘর্ষে খুন হয় শাকিল। এসময় আক্তার হাওলাদার সমর্থকদের বাড়িতে আগুন দেয় যাচ্চু হাওলাদার গ্রুপের বিক্ষুব্ধরা। পরে ৬৭ জনের নাম উল্লেখ ও আরো অজ্ঞাত ২০/২৫ জনকে আসামি করে মাদারীপুর সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে জমিজমা সংক্রান্ত পূর্ব শত্রুতার জেরে রিনা বেগম (৪৮) নামে এক নারীকে (আক্তার হাওলাদারের বংশীয় ভাইয়ের স্ত্রী) ৪৭ নম্বর আসামি করা হলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে প্রেরণ করেন। এদিকে তার স্বামী আলমাস হাওলাদার (৫৫) সহ আক্তার হাওলাদার পক্ষের পুরুষরা ও অধিকাংশ নারীরা পলাতক রয়েছেন। তাদের বসতবাড়ি ফাঁকা থাকার সুযোগে শুক্রবার (৪ এপ্রিল) গভীর রাতে জেলে থাকা নারী রিনা বেগমের বিল্ডিং এ ভাংচুর করে যাচ্চু হাওলাদার গ্রুপের কামরুল হাওলাদার ও তার লোকজন। এসময় ঘরে পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকিও দেয় তারা। পরে শনিবার (৫ এপ্রিল) হুমকিকে বাস্তবে রুপ দিতে ওই নারীর বিল্ডিং সহ মালেক হাওলাদার, হাফেজ হাওলাদার, রাজিব হাওলাদার, আরিফ হাওলাদার, জসিম হাওলাদার, আলমগীর হাওলাদার, জাহাঙ্গীর হাওলাদারের বসতবাড়িতে লুটপাট করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এ খবর পেয়ে মাদারীপুর ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এ অগ্নিকান্ড ও লুটপাটের ঘটনায় বিএনপি নেতা যাচ্চু হাওলাদার ও তার পক্ষের লাবলু হাওলাদার, আলামিন চৌকিদার, সোহেল হাওলাদার, কামরুল হাওলাদার, মোকিম হাওলাদার, মিরাজ হাওলাদার, সালমা ও সাবেক মহিলা কাউন্সিল ছাইদা সালমা জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত রিনা বেগমের বোন লিমা বেগম বলেন, আমার বোন জামাই ঢাকা সিদ্দিশ্বরী কলেজে চাকরি করে। বোন বা দুলাভাই কেউই কোন রাজনীতির সাথে জড়িত না। আর কখনো মারামারি ঝগড়াও করে নাই। তারপর তাদের দুইজনকেই হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে। সেই মামলায় আমার বোন জেলে রয়েছে।
দুলাভাইয়ের ফুফাতো বোন সালমা বেগমের সাথে জায়গা নিয়ে ঝামেলা আছে এজন্য তাদের নাম দিছে। ওই সালমার স্বামী মোকিম হাওলাদার, তার ছেলে কামরুল হাওলাদার, দেবর মেরাজ হাওলাদার দাবি করে বিল্ডিং এর ভিতর জায়গা পাবে। এর জন্য বাড়ি ফাকা থাকার সুযোগে ভাংচুর করে হুমকি দিয়েছিল আগুন দিয়ে বাড়ি পুড়িয়ে দেবে। এখন তাই করলো।
ক্ষতিগ্রস্ত আলমাস হাওলাদারের ভাইয়ের স্ত্রী আম্বিয়া বেগম বলেন, আমাদের উপর যে অন্যায় অত্যাচার হইতেছে প্রশাসনের কাছে এর বিচার চাই। আমরা কিছু বলতে গেলে এখানে থাকতে পারবো না। আমাদের উপর হামলা হবে।
এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মাদারীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোকছেদুর রহমান বলেন, বিশৃঙ্খলা রক্ষায় এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
LN24BD /hs
সম্পাদক ও প্রকাশক- মেহেদী হাসান
Copyright © 2025 Livenews24. All rights reserved.