ঠাকুরগাঁও: মাঠে মাঠে ও নদী তীরে ফোটে সাদা কাশফুল। বাঙালি মনে আনন্দের দোলা জাগায় শরতের এই ফুল। শিশির ভেজা সবুজ ঘাস, নীল আকাশ ও সাদা কাশফুল মনে শিহরণ জাগে। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের শইফতপাড়ার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া টাঙ্গনের তীরে এবং বালুচরের বিভিন্ন জায়গায় বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ফুটেছে শরতের কাশফুল। শুভ্র এই ফুলবনে জেলাবাসী মনের প্রশান্তির জন্য প্রতিদিন ছুটে যায়। এখানে একদিকে নদীর কলতান অন্যদিকে কাঁশফুলের সৌন্দর্য নজর কাড়ছে সবার। যান্ত্রিক জীবনের কোলাহল ছেড়ে মুক্ত আনন্দ পেতে প্রতিনিয়ত মানুষ ছুটে আসছে এ কাশবনে।
শরতকে বলা হয় নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অনন্য ঋতু। আর এই শরতে প্রাকৃতিক ভাবে জন্মে উঠা সবুজ গড়নের কাঁশবনের গাছের ডগায় ফুটন্ত কাঁশফুল নজর কাড়ে যে কারোর। তেমনি এই নদীর ধারের সাদা কাঁশফুলের শুভ্রতা ও নদীর কলতানে বিমুগ্ধ হচ্ছেন প্রকৃতি-প্রেমিরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বামন শ্মশান ঘাটের পাশেই টাঙ্গন নদীর এলাকাজুড়ে সাদার মেলা বসিয়েছে কাশফুল। নদীর বুক ছুঁয়ে শীতল হাওয়া ভেসে আসছে কাশের বনে। হাওয়ায় দুলছে, নেচে উঠছে কাশফুল। মনোমুগ্ধকর এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে আশপাশ এলাকার বিভিন্ন বয়সের মানুষ ছুটে এসেছেন। তরুণ-তরুণীর সংখ্যাই বেশি। তাদের কেউ সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি মোবাইল ফোনে ছবি তুলছেন। কেউ আবার কাশফুল ছিঁড়ে তোড়ার মতো তৈরি করছেন। আর আশপাশে শিশুরা কাশবনে খেলায় মেতে উঠেছে। শেষ বিকালে কোলাহল বেড়ে যায় কয়েক গুণ। কারণ বেশিরভাগ সৌন্দর্যপিপাসু আসেন এ সময়।
স্থানীয়রা জানান, ভাদ্রের শেষ দিকে এখানে কাশফুল ফুটতে শুরু করে। একসময় পুরো এলাকা সাদা হয়ে যায়। কার্তিক পর্যন্ত থাকে কাশফুলের এ সৌন্দর্য। যান্ত্রিক জীবনের কোলাহল ছেড়ে মুক্ত আনন্দ পেতে প্রতিনিয়ত এখানে ছুটে আসে মানুষ।
এখানে বেড়াতে আসা গৃহিণী রিতা বেগম বলেন, কাশফুলের সমারোহে বিকালের বাতাস যেন শীতের আগমনের বার্তা দিচ্ছে। শৈশবের স্মৃতিগুলোও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। এই অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পেরে খুবই ভালো লাগছে।
ঠাকুরগাঁও সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী প্রিয়তা বলেন, সাদা কাশফুল ও সবুজের পাশ দিয়ে চলার অনুভূতি অন্যরকম। এখানে কাশফুলের অপরূপ সৌন্দর্য দেখে মন ভরে গেছে। স্মৃতিটা ধারণ করে রাখছি মুঠোফোনের ক্যামেরায়। আরেক শিক্ষার্থী জুলী বলেন, ‘কাশফুল ছাড়া শরৎ পরিপূর্ণ হয় না। টাঙ্গনের তীরে প্রতি বছরই কাশফুল ফোটে। কিন্তু দুঃখের বিষয় অনেকেই ফুল ছিঁড়ে নিয়ে যায়।
সদর উপজেলার ভুল্লী থানা এলাকার বালিয়া থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে দেখতে এসেছেন আল-আমিন। তিনি বলেন মানুষের কাছে শুনে এখানে এসে দূরে নদীর ব্রীজের উপর থেকে দেখি সূর্যের আলো যখন কাঁশফুলের উপরে পরে তখন দেখতে আরও অন্যরকম সুন্দর দেখায়। আর কাছে এসে আরও আমরা বিমুগ্ধ হই। আসলে এখানে নিজে না আসলে অনুভূতিটা কেউ বুঝতে পারবে না।
কাশফুল দেখতে আসা পুরাতন ঠাকুরগাঁও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সারমিন আক্তার বলেন, আমার কাছে সাদা কাশফুল দেখতে ভীষণ ভীষণ ভালো লাগে। তাও আবার নদীর পাড়ে হলে তো কথাই নেই। বিকেল বেলা এমনিতেই নদীর পাড়ে ঘুরতে বেশ ভালো লাগে। সময় পেলেই আমার চাচাতো বোন ও ভাইদেরকে নিয়ে কাশফুলের শুভ্রত উপভোগ করতে আসি। যদি মানসিক শান্তি আর কাশফুলের শুভ্রতা উপভোগ করতে এখানে ছুটে এসেছি। প্রতি বছরই এখানে কাশফুল ফোটে।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও) মো: বেলায়েত হোসেন বলেন, দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে বাংলার চিরায়ত রুপ। এ জেলায় দিনদিন বাড়ছে মানুষ, কমছে আবাদি অনাবাদি জমি, তাই যেখানেই মানুষ প্রাকৃতিক পরিবাশ পাচ্ছে তাতেই ঝাঁপিয়ে পড়ছে। তা ছাড়া এলাকাটি শহরের কাছে এবং নিরাপদ জোন হওয়ায় দিনদিন লোকসমাগম বাড়ছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে এলাকাটিতে বাড়তি নজরদারির কথাও জানান এ কর্মকর্তা।
LN24BD
সম্পাদক ও প্রকাশক- মেহেদী হাসান
Copyright © 2024 Livenews24. All rights reserved.