আমিরুল ইসলাম কবির,গাইবান্ধা।।
গাইবান্ধার পলাশবাড়ীর সড়কেও এখন নারীরা স্কুটি ও বাইক নিয়ে ছুটে চলছেন।সমাজের নেতিবাচক কথা ও প্রতিকূল পরিবেশকে হার মানিয়ে এগিয়ে চলছে নারীরা।এসব বাইকার নারীদের মধ্যে অধিকাংশই কর্মজীবী। অর্থ ও সময় সাশ্রয়ী এবং ভোগান্তিহীন যাতায়াত মাধ্যম হওয়ায় নারীদের মাঝে বাইক বা স্কুটির জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়ে চলেছে। এনজিও নারী বাইকারদের দেখা যায় হরহামেশাই,সে তুলনায় সরকারি চাকরিজীবি নারী বাইকার নেহাৎ চোখে কম পড়ে।
পলাশবাড়ী কৃষি অফিসের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শর্মিলা শারমিন একজন নারী বাইকার। কৃষকদের পরামর্শ বাড়াতে স্কুটি চালাচ্ছেন এক বছরেরও বেশি সময় ধরে। স্কুটি থাকায় যাতায়াত ও ব্লকের কৃষি সেবার কাজটা অনেক সহজ হয়ে গেছে তার জন্য।
স্কুটি বিষয়ক কথা হলে শর্মিলা শারমিন বলেন,আমার পৌরসভা ৮ নং ব্লকে ৪টি ওয়ার্ডে কৃষকের সংখ্যা দুই হাজারের বেশি।কৃষকদের সেবা দিতে পায়ে হেটে কিংবা ভ্যান-রিকশায় যাতায়াত করতে খুব কষ্ট হতো। অনেক সময় রাস্তায় বের হলে রিকশা-ভ্যান পেতে দেরি হতো,ভাড়াও বাড়তি ও এক গ্রাম থেকে আর এক গ্রাম যেতে কস্ট হতো। আমার ইচ্ছা অনুযায়ী কৃষকদের অধিক সেবা দিতে পারছিলাম না। কিভাবে সেবা বাড়ানো যায় এ বিষয়ে পলাশবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার মোছাঃ ফাতেমা কাওছার মিশু স্যারের পরামর্শে স্কুটি কিনেছি। এখন কৃষকদের অধিক সেবা দিতে পারছি আর কোন সমস্যা হয় না। তিনি বলেন,চাকরির প্রয়োজনে মূলতঃ স্কুটিটা কেনা।
স্কুটি চালাতে গিয়ে রাস্তায় কোন সমস্যা হয় কি না এ প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রথমদিকে একটু ভয় ছিল,সংশয় ছিল পাছে লোকে কিছু বলে এই নিয়ে। স্কুটি চালাতে গিয়ে অনেক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়। অনেকে বাজে মন্তব্য ছুড়ে দেয়। এখনো পথ চলতে কটু কথা শুনতে হয। এসব আমলে না নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তনে নারীদের সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
তিনি জানান,স্কুটি নিতে পরিবার অনেক সাপোর্ট দিয়েছেন,প্রেরণা যুগিয়েছেন। এখন স্কুটি চালাতে সাচ্ছ্যন্দবোধ করি। তিনি বলেন,সময় বাঁচাতে স্কুটি চালাই। সময়ের আগেই কর্মস্থলে পৌঁছাতে পারি। ব্লকের কোন কৃষক ফোন দিলেই তাৎক্ষনিক সেবা দিতে পারি। অফিস,ব্লক পরিদর্শন, সন্ধ্যায় ব্লকের কিছু মৌজায় আলোক ফাঁদ শেষে কোয়ার্টারে ফিরি। এখন রিক্সা কিংবা পরিবহনের ঝামেলার সম্মুখীন হতে হয় না। সব মিলিয়ে স্কুটি চলার পথ ও বিভাগীয় সেবা প্রদান অনেক সহজ করে দিয়েছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা এক ইঞ্চি জমিও যেন পতিত না থাকে সে লক্ষ্য অনাবাদি পতিত জমিতে পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপণ সহ উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে ভার্মি কম্পোস্ট, নিরাপদ সবজি উৎপাদন,সরিষার আবাদ বৃদ্ধি,ঔষধি,ফল ও ফুল বাগান,ধানের জাত পরিবর্তন,লাইনে ধান রোপন,শতভাগ পাচিং,আলোক ফাঁদ এর পরামর্শ দিচ্ছেন বলে জানান উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শর্মিলা শারমিন।
উদয় সাগর গ্রামের কৃষক শামীম আহম্মেদ জানান,শর্মিলা শারমিন আপাকে ফোন করলেই উনি দ্রুত চলে আসেন ও পরামর্শ দেন। তার পরামর্শে আমার সরিষা চাষাবাদ করে তেল ফসল আবাদ সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য পর পর দুইবার আমি জেলায় সেরা কৃষক নির্বাচিত হয়েছি।
শর্মিলা শারমিন বিগত ২০১৫ সালের ১৮ অক্টোবর অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয়,কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর, রংপুর অঞ্চলে উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। প্রথম কর্মস্থল গোবিন্দগঞ্জ কৃষি অফিস। পরবর্তীতে বদলী হন বর্তমান কর্মস্থল পলাশবাড়ী কৃষি অফিসে। তিনি তেল ফসলের আবাদ সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য গাইবান্ধা জেলায় প্রথম ও রংপুর অঞ্চলে দ্বিতীয় হয়ে সম্মাননা প্রাপ্ত হন। তিনি এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জননী।
উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শর্মিলা শারমিন তার এসব কাজগে এগিয়ে নিতে কৃষকদের সহযোগিতা সহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের দোয়া,আশীর্বাদ ও সহযোগিতা কামনা করেন।
LN24BD
সম্পাদক ও প্রকাশক- মেহেদী হাসান
Copyright © 2024 Livenews24. All rights reserved.