সরকারের পতন ঘটাতে এক দফার আন্দোলনে থাকা বিএনপি কর্মসূচি নিয়ে নতুন করে ভাবছে। চলমান কর্মসূচিতে সরকারের পতন ঘটানো যাবে না সেটা অনুভব করে বড় আন্দোলনের কথা ভাবছে প্রায় ১৫ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি। যুগপৎ আন্দোলনে থাকা আরও বেশ কিছু দলের সঙ্গেও সে ব্যাপারে আলোচনা করছে বিএনপি। নতুন আন্দোলনের কর্মসূচির ঘোষণা চলতি সপ্তাহেই আসতে পারে বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা।
জার্মানভিত্তিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলের খবরে বলা হয়, এই সেপ্টেম্বরেই বড় আন্দোলনের শুরু করতে চায় বিএনপি। দুই এক দিনের মধ্যেই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলে বিএনপির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। আর সেজন্য যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গেও আলাপ চলছে বলে নেতারা জানান। বিএনপি মনে করে চলতি মাস থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ আরও বাড়বে।
ডয়চে ভেলে জানায়, গত ৪ সেপ্টেম্বর রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকেএই বড় আন্দোলন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তাদের আন্দোলনের কর্মসূচি দ্রুতই চূড়ান্ত হবে। আদালত ঘেরাওয়ের কর্মসূচিতে তারা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। জানা গেছে, তারা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সচিবালয় ও ঢাকা ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচির প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রয়োজনে হরতালের মতো কর্মসূচিও দেবে।
বিএনপি নেতাদের বক্তব্য- এখন এমন কর্মসূচি দেওয়া হবে যাতে সরকার পদত্যাগে বাধ্য হয়। তারা মনে করে, তাদের যে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চলছে তাতে সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়ছে। তবে এই কর্মসূচিতে সরকার পদত্যাগ করবে বলে মনে হয় না। সরকার যাতে পদত্যাগ করে তেমন কর্মসূচি দেওয়া হবে।
এবার সব কর্মসূচিই যুগপৎভাবে পালন করা হবে। বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে যে ৩৭টি দল যুক্ত হয়েছে তার বাইরে আরও কয়েকটি দলও একই কর্মসূচি পালন করবে। তাদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামী অন্যতম।
বিএনপি এবার তার সবধরনের সহযোগী সংগঠনকে একযোগে মাঠে নামাবে। ছাত্ররা যাতে আন্দোলনে সক্রিয় হয় তার জন্য অন্যান্য ছাত্র সংগঠনকে নিয়ে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের মতো কিছু একটা করার কাজ চলছে। কারণ তারা মনে করে, আন্দোলন সফল করতে হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের মাঠে নামাতে হবে। আর পেশাজীবীসহ শ্রমিক সংগঠনগুলোকেও তারা সক্রিয় করার কাজ করছে। তাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক চলছে। তাদের নিয়ে তারা মোর্চা গঠন করতে চায়।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, আমরা বড়ধরনের কর্মসূচিতে যাচ্ছি। তবে সব কর্মসূচিই হবে শান্তিপূর্ণ। দলের মহাসচিব দুই-একদিনের মধ্যেই সংবাদ সম্মেলন করে সেই কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। সেই কারণে কী কী কর্মসূচি থাকছে তা আমি প্রকাশ করছি না। তবে কর্মসূচিটি অবশ্যই আরও কঠোর হবে। সরকার যাতে পদত্যাগে বাধ্য হয় সেরকম কর্মসূচি দেওয়া হবে।
তার কথায়- দেশের হাজার হাজার নেতাকর্মী এখন বড় কর্মসূচির অপেক্ষায় আছে। তারা হামলা-মামলা উপেক্ষা করে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত। আর এই আন্দোলনে ব্যাপকভাবে সাধারণ মানুষ অংশ নেবে। আমাদের প্রস্তুতি সেরকমই। আমরা চলতি মাস থেকেই নতুন আন্দোলন শুরু করব। এরপর অক্টোবর নভেম্বর যা লাগে আন্দোলন চলবে। সপ্তাহের প্রতিদিনই আমাদের কর্মসূচি থাকবে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত নয় এমন অনেক দল এখন সরকার পতনের আন্দোলনে যুক্ত হচ্ছে। তারা একই কর্মসূচি আলাদাভাবে পালন করবে। এরমধ্যে জামায়াত ছাড়াও চরমোনাইর পীরের দল আছে। সিপিবিসহ বাম ঘরানার আরও দল আছে।
তার বিবেচনায়- সরকারের ওপর সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আন্তর্জাতিক চাপ আরও বাড়বে। জি-২০ সম্মেলনেরও মূল প্রতিপাদ্য ছিল গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার। তারা সবাই সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বলছেন। এটা কোনো দলের পক্ষে কথা নয়। এটা গণতন্ত্রের জন্য।
এদিকে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ডয়চে ভেলেকে বলেন, জনগণের রায় তো প্রতিদিনই প্রকাশিত হচ্ছে। সরকার তো জবরদস্তি কায়দায় ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর একম একটি মনোভাবই প্রকাশ পাচ্ছে। তাই মানুষকে আরও বড়ধরনের প্রতিবাদে যেতে হবে, যাতে সরকার পদত্যাগে বাধ্য হয়।
তিনি জানান, সামনে কর্মসূচি আরও বাড়বে। আরও কঠোর কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আলোচনার মধ্য দিয়েই কর্মসূচি চূড়ান্ত হবে। আমরা গণতান্ত্রিক আন্দোলন করছি। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের যে রীতি পদ্ধতি আছে তার মধ্য দিয়েই আমরা আন্দোলনকে অগ্রসর করব।
তবে যুগপৎ আন্দোলনের আরেক শরিক গণতান্ত্রিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বড় আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আমার ব্যক্তিগতভাবে কোনো আলাপ হয়নি। লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠকে আলাপ আলোচনা হয়। কিন্তু এখনো বড় কর্মসূচি নিয়ে হয়নি। আমরা কোনো মতামতও দিইনি। বিএনপি আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়ে দিতে পারে। তারপর সেটা ধরে জবরদস্ত আন্দোলন হতে পারে। বিএনপি এটা বোঝে যে, এটা আগেই করতে হবে। সেই জন্য সেপ্টেম্বর অক্টোবরের কথা বলছে। তবে এখনো প্ল্যান করা হয়নি যে কীভাবে করা হবে।
তিনি এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঠিক ঝিমানো নয়, বিএনপি একটু ডিরেকশন লেস হয়ে পড়েছে বলে মনে হয়। আন্দোলন হলে তো সংঘাত সংঘর্ষ হবেই। বিএনপি সেটা অ্যাভয়েড করতে চায়। এটা বিএনপি একদম ফেসই করতে চায় না।
তার কথায়, তারা (বিএনপি) বোধ হয় বড় কর্মসূচির জন্য কোনো নির্দেশনার অপেক্ষায় আছে। অথবা আন্তর্জাতিক চাপ কতটা হয় তার অপেক্ষা করছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক- মেহেদী হাসান
Copyright © 2025 Livenews24. All rights reserved.