রাজধানীর গুলিস্তান, বঙ্গবাজার, নিউ সুপার মার্কেটসহ একের পর এক অগ্নিকাণ্ডে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষের মনে। বিশেষ করে গত ৪ এপ্রিল রাজধানীর বঙ্গবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও ১৩ এপ্রিল গুলিস্তানে অগ্নিকাণ্ডের রেশ কাটতে না কাটতেই ১৫ এপ্রিল ভোরে নিউ সুপার মার্কেটে আগুন লাগে। প্রতিটি অগ্নিকাণ্ডেই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটে। নিষ্ঠুর আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় হাজারো মানুষের স্বপ্ন।
পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের শুরু থেকে এপ্রিল পর্যন্ত রাজধানী ঢাকায় ছোট-বড় মিলিয়ে ২১টির বেশি অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় ১০টি
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট আব প্লানার্সের (বিআইপি) রিসার্চ সেল রাজধানীর অগ্নিঝুঁকিসম্পন্ন এলাকাগুলোকে পাঁচটি শ্রেণিতে ভাগ করেছে। এগুলো হলো- অত্যন্ত উচ্চ অগ্নিঝুঁকিসম্পন্ন অঞ্চল, উচ্চ অগ্নিঝুঁকিসম্পন্ন অঞ্চল, মাঝিারি অগ্নিঝুঁকিসম্পন্ন অঞ্চল, কম অগ্নিঝুঁকিসম্পন্ন অঞ্চল, খুবই কম অগ্নিঝুঁকিসম্পন্ন অঞ্চল।
অত্যন্ত উচ্চ অগ্নিঝুঁকিসম্পন্ন অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে পাঁচটি থানা এলাকা- কোতোয়ালি, বংশাল, চকবাজার, গুলশান ও মতিঝিল।
বিআইপি’র সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহাম্মদ মেহেদী আহসান বলেন, পরিকল্পিত বাসযোগ্য ঢাকা গড়তে আমরা পরিকল্পনাবিদরা সব সংস্থার সাথে একত্রে কাজ করতে চাই। সরকারি অনেক সংস্থা আছে যাদের কাজে পরিকল্পনাবিদের প্রয়োজন হলেও নেই। অনেকের থাকলেও পর্যাপ্ত নয়। কোনো কাজ করার জন্য সবার আগে প্রয়োজন পরিকল্পনার। আমরা বলছি, পরিকল্পনায় যদি অসঙ্গতি ধরা পড়ে যিনি পরিকল্পনা করেছেন তাকে জবাদিহির আওতায় আনতে হবে। পরিকল্পিত নগরী গড়া গেলে অগ্নিদুর্ঘটনা কমবে। যেমনটা দেখা যায় পরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠা বনানী, উত্তরার মতো এলাকায়।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমাদের মার্কেটগুলোতে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রাংশের অভাব রয়েছে। এছাড়া সস্তায় যন্ত্রাংশ কেনার প্রবণতা রয়েছে। অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রও থাকে না। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ও মার্কেটগুলো শনাক্তে জরিপ প্রয়োজন। একটা জরিপ করতে এক বছরের বেশি সময় লেগে যায়। তাই আমরা চিন্তা করছি আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে তিন মাসের মধ্যে জরিপ করার।
অত্যন্ত উচ্চ অগ্নিঝুঁকিসম্পন্ন অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে পাঁচটি থানা এলাকা- কোতোয়ালি, বংশাল, চকবাজার, গুলশান ও মতিঝিল।
লে. কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ঝুঁকি থাকার পরও মার্কেট মালিক কিংবা সংশ্লিষ্ঠদের সহযোগিতার মানসিকতা থাকে না বা আমরা তাদের পাশে পাই না। সবাই একত্রে কাজ করা গেলে অগ্নিঝুঁকি কমানো সম্ভব। এর জন্য সবার আগে আমাদের সচেতনতা বাড়াতে হবে। এছাড়াও অগ্নিকাণ্ডের কবলে পড়ার পর ভবন মালিক বা যারা উপস্থিত থাকেন তাদেরই ফাইট করতে হয়। আমরা (ফায়ার সার্ভিস) আসার আগে পর্যন্ত আপনাকেই ফাইট করতে হবে। কি করে ফাইট করতে হয় শিখতে হবে।
অগ্নিঝুঁকি কমাতে বিআইপির প্রস্তাব
ঢাকার সব মার্কেট এবং উচ্চ ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাকে অগ্রাধিকার দিয়ে শিগগিরই ‘ফায়ার সেফটি’ জরিপ করা প্রয়োজন। ক্রমান্বয়ে সব ইমারতকেই এ ব্যবস্থার আওতায় আনতে হবে। এই ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে শক্তিশালী পরিবীক্ষণ ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে। ওয়ার্ড কাউন্সিরদের নেতৃত্বে সব কর্তৃপক্ষের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সামাজিক আন্দোলনে রূপ দিতে হবে।
জলাভূমি রক্ষায় ‘বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা’র (ড্যাপ) কঠোর বাস্তবায়ন করতে হবে। ঢাকার সার্বিক তাপমাত্রা (আরবান হিট আইল্যান্ড) কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সেই লক্ষ্যে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ‘গ্রিন সিটি’ বাস্তবায়নে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
কারিগরি দক্ষতা উন্নয়নে প্রান্তিক পর্যায়ের সব টেকনিশিয়ানকে প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ দিতে হবে। দক্ষতা উন্নয়নে কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সার্টিফিকেশন এবং লাইসেন্স অনুমোদন করতে হবে। একটি পরীক্ষায় পাসের মাধ্যমে প্রতি তিন বছর পর পর লাইসেন্স নবায়ন করতে হবে।
ইমারত নির্মাণের পূর্বে পরিকল্পনা অনুমোদনের ক্ষেত্রে বিএনবিসি ও ড্যাপে উল্লেখিত সব নির্দেশনার কঠোর বাস্তবায়ন করতে হবে। ভূমির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতকরণে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে একসাথে কাজ করতে হবে।
অকুপেন্সি সার্টিফিকেশনের জন্য ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ দ্বারা ফায়ার সেফটি অডিট করানো এবং নির্দিষ্ট সময় পর পর পরিবীক্ষণ করতে হবে। অকুপেন্সি সার্টিফিকেটের দেওয়ার শর্ত হিসেবে ফায়ার সেফটি নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলার বাধ্যবাধকতা রাখতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের (ডিএসসিসি, ডিএনসিসি, রাউজক, ফায়ার সার্ভিস, তিতাস, ওয়াসা ইত্যাদি) মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয় শক্তিশালী করতে হবে।
info- dhakmail
সম্পাদক ও প্রকাশক- মেহেদী হাসান
Copyright © 2024 Livenews24. All rights reserved.