অনলাইন ডেস্ক।।
বিশ্বকাপ শুরুর দু’সপ্তাহ আগে অ্যাকিলিস টেন্ডনের চোটে সবাইকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছিলেন মেসি। সম্ভাব্য শেষ বিশ্বকাপ খেলবেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। অনাহূত চোট কী তবে মরুর বিশ্বকাপে তাকে গড়তে দেবে না জাদুকরী কীর্তি? ক’দিন যেতেই অবশ্য শঙ্কার মেঘ কেটে গিয়েছিল মেসির নেতৃত্বে আর্জেন্টিনা সংযুক্ত আরব আমিরাতকে প্রস্তুতি ম্যাচে ৫-০ গোলে হারিয়ে ১৭ নভেম্বর পা রাখে দোহায়। সে ম্যাচে নিজে এক গোল করেছেন, সতীর্থকে দিয়ে করিয়েছেন একটি। তাতে ভাবনা অনেকটাই দূর হয়েছিল। তবে দোহায় নামার পর ফের দানা বাঁধতে শুরু করে রহস্য। শুক্রবার কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ নম্বর ট্রেনিং গ্রাউন্ডে লিওনেল স্কালোনির দল ঘাম ঝরিয়েছে মেসিকে ছাড়া। শনিবার বিকেলেও মেসির জন্য প্রায় চার-পাঁচশ সাংবাদিকের রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা। বেঁধে দেওয়া ১৫ মিনিটে তাকে দলের সঙ্গে দেখা যায়নি। তবে তিনি ছিলেন। একাকী সেরেছেন অনুশীলন। তাতেই বেড়েছে ধোঁয়াশা। কাল সৌদি আরবের বিপক্ষে দেখা যাবে তো মেসিকে?
স্কালোনি যখন তার সহকারীদের নিয়ে মাঠে এলেন তখন ফিসফাসটা বেড়ে গেল। এরপর একে একে এমি মার্তিনেজ, রদ্রিগো ডি পল, গনজালো মনতিয়েলরা আসতে শুরু করলেন সবার দৃষ্টি তখন খুঁজে ফিরছে পরম প্রার্থিত তারকাকে। সে চোখে ডি মারিয়া, দিবালাদের মতো মুখগুলোও তখন তারকা দর্শনের পথের দেয়াল। অনেক খুঁজেও মেসিকে দেখা যায়নি দলের মধ্যমণি হতে। ভাঙা মনে অনেকেই ফিরে গেলেন। এর মধ্যেই ভাগ্যবান দু’একজনের ক্যামেরা ঠিকই খুঁজে পেল মহানায়ককে। একজন ট্রেনার সঙ্গে একাকী ফিটনেস ট্রেনিং করলেন। অন্তর্জালে সেই ছবিগুলো সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই সুই হয়ে বিঁধল ভক্তদের হৃদয়ে। মেসি কেন একা? তবে কি...?
মিডিয়া সেন্টারে আর্জেন্টাইন টিভি ও রেডিও উপস্থাপক ফ্লাভিও আজ্জেরো কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে বলছিলেন খুব দামি একটা কথা, ‘মেসিকে একা দেখে বুকের ভেতরে কেমন যেন একটা অনুভূতি হচ্ছে। কোপা জয়ের পর থেকেই এটি শুধুই মেসির আর্জেন্টিনা। এখানে মেসির না থাকাটা খুব বেমানান।’ পাশ থেকে মেক্সিকান এক ফটো জার্নালিস্ট রদ্রিগো অভয় দিলেন, ‘আরে এ সব কিছুই জানা আছে। চোট-ফোট কিছুই নয়। ঠিকই দেখবে খেলে ফেলেছে। আসলে তোমাদের কোচ (স্কালোনি) দেখতে চাইছে মেসিকে ছাড়াও তার দলটা কেমন। কীভাবে অন্যরা দায়িত্ব নেয়।’ এরপরই দিলেন মোক্ষম একটা খোঁচা, ‘তবে এটা মনে রেখো, মেসি যদি আরবের বিপক্ষে নাও খেলে, আমাদের বিপক্ষে ঠিকই খেলবে। কারণ মেক্সিকোকে আর্জেন্টিনা সবসময় সমঝে চলে। এমন ম্যাচে স্কালোনি কোনো ঝুঁকি নেবে না।’
মেসি এভাবেই দোহা শহরটাকে মোহিত করে রেখেছেন। আর্জেন্টিনার জার্সিতে শেষ পাঁচ ম্যাচে তার কীর্তি ভাবিয়ে তুলছে আর্জেন্টিনা বিরোধীদের। পাঁচ ম্যাচে ১১ গোল! এক এস্তোনিয়ার বিপক্ষেই পাঁচটি! তো মাঠের এমন দুর্ধর্ষ মেসিকে নিয়ে মাঠের বাইরে তো আলোচনা হবেই। আকাশি-সাদায় যতই শত্রুতা থাকুক, প্রতিপক্ষও মেসির মোহনীয় মুভে খুঁজে নিতে চায় নির্জলা আনন্দ। ওই মেক্সিকান রদ্রিগো যেমনটা বলছিলেন আর কি।
দোহার আল বিদা মেট্রো স্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষার ফাঁকে কথা হলো এক আর্জেন্টাইন ভক্তের সঙ্গে। ২৬ বছরের আদেলগোন্দা পেশায় গ্রাফিক ডিজাইনার। নিজে শিল্পী হলেও এখানে এসেছেন প্রজন্মের সেরা ফুটবল শিল্পীর নান্দনিকতার চোখের স্বাদ নিতে। তার মনের কোণেও অবশ্য শঙ্কা উঁকি দিচ্ছে, ‘দেখো, এবার আমাদের ৩৬ বছরের আক্ষেপ ঘোঁচানোর ভালো সুযোগ আছে। দলটা টানা ৩৬ ম্যাচ ধরে অপরাজিত। মেসিও আছেন দারুণ ছন্দে। এবার যদি না হয়, তবে কবে হবে? এর মধ্যে মেসির চোটে আমাদের নির্ঘুম রাত কাটছে। শুরু থেকে অধিনায়ক না থাকলে কী যে হবে! ঈশ্বরের কাছে সারাক্ষণ প্রার্থনা করছি তার সুস্থতার।’
গেল বছর কোপা আমেরিকা জেতানোর পর থেকেই মেসিতে বিশ্বাস প্রবল থেকে প্রবলতর হয়েছে আর্জেন্টাইন ভক্তদের। ১৯৮৬’র ম্যারাডোনার মতো ২০২২’র মেসিও দেশকে দেবেন পরম আরাধ্য শিরোপার স্বাদ। দেশের মানুষের দীর্ঘ অপ্রাপ্তি ঘোচানোর দায় তো আছেই, ৩৫ বছর বয়সী মেসির দিকে চেয়ে আয়োজক কাতারও। তাদের এতদিনের সব আয়োজন সফল করতে আরেকবার সবুজ ক্যানভাসে জাদুকরী রূপে ধরা দিতে হবে খুদে জাদুকরকে। তার আগে প্রথম ম্যাচে তার খেলা নিয়ে ধোঁয়াশাটা কেটে গেলেই হয়।
সম্পাদক ও প্রকাশক- মেহেদী হাসান
Copyright © 2025 Livenews24. All rights reserved.