অনলাইন ডেস্ক।
নাম তার পারুল চাকমা। স্বামীর ছেড়ে গেছেন অনেক দিন আগে। নিজেও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। ঠিকমতো কাজ করতে পারেন না। থাকেন বাবার বাড়িতে। সেখানেও অভাব নিত্যসঙ্গী। খেয়ে না খেয়ে দিন পার করতে হয়। এ অবস্থায় সন্তানকে মানুষ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। তাইতো বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার একটি বাজারে নিজের বুকের ধন ৬ বছরের রামকৃষ্ণ চাকমাকে বিক্রি করতে আনেন। বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
জানা গেছে, খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার একটি বাজারে বৃহস্পতিবার পারুল চাকমা তার কলিজার টুকরা ছেলেকে বিক্রি করতে আনেন। এ সময় তিনি ছেলের দাম চান ১২ হাজার টাকা। পরে স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি হস্তক্ষেপ করে বিক্রি না করার জন্য। বাজার থেকে ছেলেসহ মাকে কমলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুনীল চাকমার কাছে নিয়ে যায়। চেয়ারম্যান তাদের বুঝিয়ে পরিবারের কাছে ফেরত পাঠান। পরে ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন পারুল চাকমা।
পারুল চাকমা খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার ভাইবোনছড়া পাকোজ্জ্যাছড়ি গ্রামের কালাবো চাকমার মেয়ে। স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার পর থেকে তিনি ছেলেকে নিয়ে বাবার বাড়িতে থাকেন।
জানতে চাইলে কমলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুনীল চাকমা বলেন, ছেলেকে বাজারে বিক্রি করতে এনেছেন এক মা। বিষয়টি জানার পর আমি ছেলেসহ মাকে অফিসে নিয়ে আসি। পরে পরিবারের জিম্মায় তাদের হস্তান্তর করি।
ছেলের মা পারুল চাকমা বলেন, অভাবের সংসার। স্বামী ছেড়ে চলে গেছে অনেক দিন আগে। কোনো যোগাযোগ নেই তার সঙ্গে। ঘরে কোনো খাবার নেই। আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ। ওষুধ কেনার টাকা নেই। কীভাবে বাঁচব ছেলেকে নিয়ে? তাই ছেলেকে ভালো পরিবারে দিতে চেয়েছিলাম।
ছেলেকে বিক্রি করতে আনার বিষয়টি জানার পর শুক্রবার পারুল চাকমা ও তার ছেলের খোঁজ নিতে তাদের বাড়িতে জান সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা। খোঁজ-খবর নিয়ে তাদের আগামী ছয় মাসের খাবার সামগ্রী ও নগদ অর্থ দিয়ে আসেন। তাদের জন্য একটি সরকারি ঘরের ব্যবস্থা করে দেবেন বলেও আশ্বাস দেন।
তিনি বলেন, এ সময়ে এসে এমন ঘটনা খুবই দুঃখজনক। ছেলেকে বিক্রি করতে আনার বিষয়টি আমি জানার পর তাদের দেখতে এসেছি। পারুল চাকমা খুব বেশি অভাবে থাকার কারণে এই কাজটি করেছেন বলে জানতে পেরেছি। ছেলেটিকে কোনো সরকারি শিশু সদনে পড়ালেখার জন্য পাঠানো যায় কি না দেখব।
সম্পাদক ও প্রকাশক- মেহেদী হাসান
Copyright © 2024 Livenews24. All rights reserved.