Tuesday, March 19, 2024
HomeScrollingঠাকুরগাঁওয়ে আশ্বিনের বৃষ্টির ছোঁয়ায় প্রাণ ফিরেছে আমন খেতে

ঠাকুরগাঁওয়ে আশ্বিনের বৃষ্টির ছোঁয়ায় প্রাণ ফিরেছে আমন খেতে

ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা।।

আমন মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় বিপাকে ছিলেন কৃষকেরা। অনেকে সেচ দিয়ে আমন ধান রোপণ করেছেন। এতে তাঁদের বাড়তি খরচ হয়েছে। অবশেষে আশ্বিনের বৃষ্টি কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। বৃষ্টির ছোঁয়ায় শুকিয়ে যাওয়া প্রকৃতি প্রাণ ফিরে পেয়েছে। সেই সাথে কৃষকরাও সেচ ছাড়া বৃষ্টির পানিতে আমন ধানের পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।

আমন চাষ সাধারণত বৃষ্টিনির্ভর। এবছর বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় কৃষকরা সেচ দিয়েই ধান রোপণ শুরু করেন। এতে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দেয়। শেষ পর্যন্ত আশ্বিনের বিদায় লগ্নে বৃষ্টি হওয়ায় কৃষকদের মাঝে অনেকটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। রোপা আমনের বীজতলা আষাঢ় মাসে তৈরি করে বীজ বোনা হয়। এরপর শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে বীজতলা থেকে চারা সংগ্রহ করে ক্ষেতে রোপণ করা হয়। চলতি মৌসুমে আষাঢ়-শ্রাবণে বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষকরা সেচ দিয়ে জমি তৈরি করে আমন চাষ শুরু করেন। এতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে দেখা দেয় শঙ্কা।

কৃষকেরা জানান, প্রায় বৃষ্টিহীন আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিনের প্রথম ও শেষের দিকে বৃষ্টি হওয়ায় আমনের জন্য আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে। ঠাকুরগাঁওয়ের আমন চাষিদের অভিমত হলো এসময়ে বৃষ্টি না হলে বড় বিপদে পড়তে হতো। এমনিতেই রোপণের শুরুতেই সেচের পানি দিতে হয়েছে। শেষ সময়ের এই বৃষ্টিটুকু না হলে বিঘাপ্রতি খরচ বাড়তো গড়ে ৪/৫শত টাকা।

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় ১ লাখ ৩৭ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৩৩০ মেট্রিক টন।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে ঘুরে দেখা গেছে, পথের ধারে সবুজ আমন খেত। কৃষক কোথাও কোথাও খেতের আগাছা নিড়ানিতে ব্যস্ত। আবার কোথাও কোদাল দিয়ে খেতের আইল (সীমানা) বেঁধে দিচ্ছেন। তাঁদের চোখে-মুখে খুশির ঝিলিক।

সদর উপজেলার নিমবাড়ি এলাকার কৃষক মুনসুর আলী আট বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করছেন। গত কয়েক দিনের বৃষ্টি তাঁর মনে স্বস্তি এনে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘বৃষ্টি না থাকায় প্রথমে ডিজেলচালিত শ্যালো মেশিনে সেচ দিয়ে আমনের চারা রোপণ করতে হয়েছে। এতে বাড়তি খরচ করতে হয়েছে। কয়েক দিন বৃষ্টি না হওয়ায় খেতের মাটি ফেটে গিয়েছিল। খেতের ধানগাছ লালচে হয়ে যাচ্ছিল। ভালো ফলনের আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। গত বুধবার থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। ধানের খেত প্রাণ ফিরে পেয়েছে। আগের তুলনায় আমনের বেশি ফলনের আশা করছি। আরেক কৃষক রমজান আলী জানান, চলতি মৌসুমে তিনি চার বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন। বৃষ্টিপাত দেরিতে হওয়ায় কিছুটা সমস্যা হয়েছে। আর কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ফলনও বেশ ভালো হবে।

এবার আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয়নি। আমনের আশানুরূপ ফলনের আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বড়বাড়ি এলাকার কৃষক মাজেদ। টানা বৃষ্টিতে ভালো ফলনের আশা করছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘গত বছর ১০ বিঘা জমিতে ধান আবাদ করে ১৩২ মণ ধান পেয়েছিলাম। এ বছর ১৪০–১৪৫ মণ ধান পাওয়ার আশা করছি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমন চাষ পুরোপুরি বৃষ্টির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এবার তেমন বৃষ্টির দেখা মেলেনি। কৃষকদের শ্যালো যন্ত্র দিয়ে জমিতে সেচ দিতে হয়েছে। এতে তাঁদের বাড়তি খরচ করতে হয়েছে। স্বাভাবিক বৃষ্টি না হওয়ায় ধানের ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন। কিন্তু কয়েক দিনের বৃষ্টিতে কৃষকদের সেই দুশ্চিন্তা কেটে গেছে।

তবে যাঁরা আগাম আলুর চাষ করেছিলেন, বৃষ্টির কারণে তাঁরা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। অনেক কৃষক পানি জমে আলুর খেত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।

 

LN24BD

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments