Thursday, March 28, 2024
HomeScrollingহারিয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী ‘পালকি’

হারিয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী ‘পালকি’

মোঃ নূর ইসলাম নয়ন |

দিনাজপুরে হারিয়ে গেছে ঐহিত্যবাহী পালকি। আধুনিকতার ছেঁায়ায় এখন বিয়ে করে বৌ রা মাইক্রো-কার এ শ্বশুর বাড়ি যায়। আর পালকিতে তারা যায় না। চোখে দেখা যায় না সেই ঐহিত্যবাহী পালকি। এই পালকি যেন রূপকথার কল্প কাহিনী হয়ে গেছে। আধুনিক প্রযুক্তির যানবাহনের যুগে হারিয়ে গেছে হাজার বছরের গ্রামবাংলার প্রাচীন ঐতিহ্যের ধারক ‘পালকি’।

গ্রামবাংলার ঐতিহ্য পালকি এখন আর দেখা যায় না। এক সময় গ্রামের বিয়ের বর-বধুকে বাহনের অন্যতম বাহন ছিল পালকি। বাংলার সবুজ শ্যামল মেঠো পথের এক সময়ের নিত্য দিনের বাহন ছিল পালকি। পালকির সঙ্গে মিশে ছিল মধুময় এক স্বপ্ন। গায়ের পথে পালকি করে নববধুকে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখতে গ্রামের ছেলে-মেয়েরা রাস্তায় আর বৌ-ঝিয়েরা বাড়ির ভিতর থেকে উঁকি-ঝুকি মারত।

পালকির মধ্যে বসা বৌকে দেখে তারাও হারিয়ে যেত কল্পনার রাজ্যে। ছয় বেয়ারা পালকি কঁাদে নিয়ে ছন্দ তুলে বৌকে নিয়ে বাংলার শ্যামল মেঠো পথে চলত। তখন গ্রাম বাংলার সৌন্দর্য্য অনেক বেড়ে যেত। সাজানো-গোছানো পালকি করে আগেরকার দিনে নববধু বাপের বাড়ি যেত। এ যুগের বধুরা আর পালকিতে লজ্জা রাঙা মুখে শ্বশুর বাড়ি যায় না। আমাদের সেই শ্যামল বাংলা, সেই মেঠো পথ, নতুন বধু সবই আছে কিন্তু যান্ত্রিক যুগে শুধু নেই কেবল পালকি। পালকির ব্যবহার কিভাবে কখন এদেশে শুরু হয়েছিল তা সঠিকভাবে জানা যায় নি।

তবে মোঘল ও পাঠান আমলে বাদশাহ, সুলতান, বেগম ও শাহাজাদীরা পালকিতে যাতায়াত করত বলে জানা যায়। ইংরেজ আমলের নীলকররা পালকিতে করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করত বলে জানা যায়। আর সেজন্যই পালকি অভিজাত শ্রেণীর বাহন হিসেবে গন্য করা হত। পালকি দেখতে অনেকটা কাঠের বােেরে কাঠামো। দৈর্ঘ্য ৬ ফুট প্রস্থে তার অর্ধেক কাঠামোটি লম্বা দুপাশে বঁাশের সাহায্যে গঁাথা। পালকির উপরে দামী কাপড় দ্বারা মোড়ানো থাকত।

তৎকালীন বাঙ্গালির সংস্কৃতিতে পালকির অবস্থান ছিল সুদৃঢ়। আগের দিনে বিত্তশালী পরিবারগুলোতে নিজস্ব পালকি ও বেয়ারা থাকত। আর নিম্নবিত্তরা তাদের বৌ-ঝিদের আনা নেয়ার জন্য ভাড়া করত পালকি। অন্যসব কাজে পালকি ব্যবহার হলেও বিয়ে-সাদিতে পালকির ব্যবহার ছিল অপরিহার্য্য। নববধুকে নিয়ে বেয়ারারা নানা সুখ-দুুঃখের গান গেয়ে দুলকি তালে চলত পালকি

বিবর্তনের ধারায় সব কিছুর পরিবর্তন ঘটেছে। ফলে বর্তমানে রাজা, বাদশা নেই, তাই পালকি ও বেয়ারাও নেই। বর্তমান যুগের নববধুরা পালকিতে চড়ে শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার স্বপ্ন দেখে না। তারা জাকজমক ভাবে সাজানো প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাসে চড়ে শ্বশুর বাড়ি যায়। তবে সেদিন আর বেশি দূরে নয়, যেদিন আমাদের নতুন প্রজন্মরা পালকি নামক মানুষের ঘাড়ে চড়ে বসা কোন বাহনের কথা বই প্রস্তকে পড়বে এবং লোক শিল্প যাদুঘরে গিয়ে সাজানো গোছানো কৃত্রিম পালকি দেখবে। দিনাজপুরের বিভিন্ন উপজেলায় বিভিন্ন গ্রামে আগের দিনে পালকির প্রচলন ছিল। গ্রামের বিভিন্ন অনুষ্ঠান ছাড়াও বিয়েতে অন্যতম বাহন ছিল পালকি। পালকি বড়লেখা উপজেলার কোথাও এখন আর দেখা যায় না। বর্তমানে পালকির প্রচলন না থাকায় এ পেশার সাথে জড়িতরা জীবন-জীবিকার তাগিদে অন্যান্য পেশা বেছে নিয়েছে।

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments