চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরে আমদানি করা এক হাজার ৩০০টি নোয়া ও হাইচ মডেলের মাইক্রোবাসকে অ্যাম্বুলেন্স ঘোষণা দিয়ে নামমাত্র শুল্কে ছাড় করানোর প্রক্রিয়া চলছে। আর এই কাজে বেছে নেয়া হয়েছে মহামারি করোনাভাইরাসের স্পর্শকাতর ইস্যুটিকে। ইতোমধ্যে ৮১২ ইউনিট মাইক্রোবাস অ্যাম্বুলেন্স দেখিয়ে খালাস করিয়েও নিয়েছে অসাধু আমদানীকারদের এই সিন্ডিকেটটি।
অভিযোগ রয়েছে, গাড়ি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বারবিডার শীর্ষ দুই নেতা চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের দুই ডেপুটি কমিশনারের মাধমে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার এই আয়োজনটি সম্পন্ন করেছেন। প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হলে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাবে সরকার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের সাবেক এক কর্মকর্তা জানান, নোয়া মডেলের একটি সাধারণ মাইক্রোবাসের নির্ধারিত শুল্ক ২০ লাখ টাকা আর হাইচ মডেলের মাইক্রোবাসের শুল্ক ১৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। বিপরিতে চিকিৎসা সামগ্রী ক্যাটাগরিতে নোয়া মডেলের একটি অ্যাম্বুলেন্সের শুল্ক ৪ লাখ টাকা আর হাইচ মডেলের অ্যাম্বুলেন্সের জন্য নির্ধারিত শুল্ক মাত্র ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এতে ১৩ শো ইউনিট সাধারণ গাড়িকে অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে ছাড় করাতে পারলে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাবে সরকার।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের একটি সূত্র জানায়, করোনার কারণে চিকিৎসা সরঞ্জামের পাশাপাশি অ্যাম্বুলেন্সের আমদানিও বেড়েছে বন্দরে। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে অ্যাম্বুলেন্স ছাড় করোনোর প্রবণতা বাড়ে অস্বাভাবিকভাবে। বিষয়টি সন্দেহ হলে চলতি মাসের শুরুতে তদন্ত শুরু করে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ। এতে সাধারণ মাইক্রোবাসকে এ্যম্বুলেন্স ঘোষণায় ছাড় করানোর বিষয়টি সামনে আসে। একপর্যায়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কমিশনারের নেতৃত্বে তিনজন ডেপুটি কমিশনার বন্দরের কার শেডে রাখা কথিত অ্যাম্বুলেন্স পরিদর্শনে যান। তখনই বড় ধরণের এই জালিয়াতির বিষয়টি স্পষ্ট হয়। আমদানি করা গাড়িগুলোর গায়ে অ্যাম্বুলেন্স লেখা থাকলেও তাতে অক্সিজেন সিলিন্ডার কিম্বা স্ট্রেচার বসানোর কোনো ব্যবস্থা নেই। ওপরে লাইট লাগানো থাকলেও তাতে সংযোগ নেই। উইন্ডো গ্লাসেও রয়েছে পার্থক্য। এক কথায় সাধারণ গাড়িগুলোকে অ্যাম্বুলেন্স দেখিয়ে খালাস করতেই এই তৎপরতা চলছে।
বিষয়টি বুঝতে পেরে ১২ জুলাই কমিশনারের নেতৃত্বে জরুরি বৈঠকে বসে কাস্টমসের কর্মকর্তারা। বৈঠকে ইতোমধ্যে খালাস করে নেয়া ৮১২টি গাড়ির ৫২ জন আমদানিকারকের কাছে গাড়িগুলোর রেজিষ্ট্রেশন কপি চাওয়ার পাশাপাশি নতুন করে খালাসে কড়াকড়ি আরোপের সিদ্ধান্ত হয়। এক্ষেত্রে বন্দরে থাকা গাড়িগুলো খালাস করতে হলে অ্যাম্বুলেন্সের পরিবর্তে সাধারণ গাড়ি হিসেবেই খালাস করতে হবে। তবে অ্যাম্বুলেন্সের জন্য নির্ধারিত শুল্ক পরিশোধ ও বাকি টাকা ব্যাংক গ্যারান্টি হিসেবে জমা দেয়ার বিধান রাখা হয়। গাড়িগুলো খালাস নেয়ার ১২০ দিনের মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করা বিআরটিএ’র কপি জমা দিলে ব্যাংক গ্যারান্টি ফেরত দেয়ার লিখিত সিদ্ধান্ত নেন কাস্টমস কর্মকর্তারা।
বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় অসাধু এসব আমদানিকারকদের মধ্যে। ১৪ জুলাই গাড়ি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বারবিডার সভাপতি আব্দুল হক ও সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে অসাধু আমদানিকারকরা ছুটে আসেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে। কাস্টমসের জয়েন্ট কমিশনার সাধন কুমার কুণ্ডুর মধ্যস্ততায় স্থগিত করা হয় কাস্টমসের সিদ্ধান্ত। এরপর থেকে প্রতিদিন ১০/১২ টি করে সাধারণ মাইক্রোবাস অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে বের হচ্ছে বন্দরের গেট দিয়ে। এসব গাড়ি গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলার বিআরটিএ থেকে সাধারণ মাইক্রো হিসেবে রেজিষ্ট্রেশন নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দেশের সর্বত্র।
অ্যাম্বুলেন্সের নামে সাধারণ গাড়ি আমদানি করার অভিযোগ অস্বীকার করে বারবিডার সভাপতি আব্দুল হক বলেন, করোনার কারণে পুরো গাড়ি ব্যবসায় ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে। বিষয়টি উপস্থাপন করে ব্যাংক গ্যারান্টির বিষয়টি ছাড় দিতে অনুরোধ করা হয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কমিশনার ফখরুল আলম জানান, প্রত্যেক আমদানিকারককে খালাস নেয়া গাড়িগুলোকে অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে বিআরটিএর রেজিষ্ট্রেশনের কপি জমা দিতে সময় বেধে দেয়া হয়েছে। সময় পার হলেই আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণাও দেন তিনি।