Tuesday, April 23, 2024
HomeScrollingষড়যন্ত্রের কারণে পদ্মা সেতু নির্মাণে ২ বছর দেরি হয়েছে

ষড়যন্ত্রের কারণে পদ্মা সেতু নির্মাণে ২ বছর দেরি হয়েছে

অনলাইন ডেস্ক।

ষড়যন্ত্রের কারণে পদ্মা সেতু নির্মাণে দুই বছর দেরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার একাদশ জাতীয় সংসদের অষ্টাদশ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সংসদ সদস্য মেরিনা জাহানের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, ষড়যন্ত্রের ফলে আমাদের সেতু নির্মাণ দুই বছর বিলম্বিত হয়েছে, কিন্তু আমরা হতোদ্যম হইনি। শেষ পর্যন্ত অন্ধকার ভেদ করে আমরা আলোর মুখ দেখেছি। দেশি ও বিদেশি সব ষড়যন্ত্র এবং বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে পদ্মা সেতুর স্বপ্ন আজ বাস্তবে রূপ পেয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ সেতুর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের আবেগ, আমাদের সৃজনশীলতা, আমাদের সাহসিকতা, সহনশীলতা ও আমাদের প্রত্যয়। আমরা এ সেতু করবই, সেই জেদ। শেষ পর্যন্ত অন্ধকার ভেদ করে আমরা আলোর মুখ দেখেছি। পদ্মার বুকে জ্বলে উঠেছে লাল, নীল, সবুজ, সোনালি আলোর ঝলকানি। ৪২টি স্তম্ভ যেন স্পর্ধিত বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন, বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না, পারেনি। আমরা বিজয়ী হয়েছি।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে ক্ষমতা নেওয়ার পর পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০০১ সালের ৪ জুলাই মাওয়া পয়েন্টে আনুষ্ঠানিকভাবে আমি পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করি। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে মাওয়া প্রান্তে সেতু নির্মাণের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। তারা জাপান সরকারকে পুনরায় মানিকগঞ্জের আরিচা প্রান্তে পদ্মা সেতুর জন্য সমীক্ষা করতে বলে। দ্বিতীয়বার সমীক্ষার পর জাপান মাওয়া প্রান্তকেই নির্দিষ্ট করে পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রতিবেদন পেশ করে।

২০০৯ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর পদ্মা সেতু নির্মাণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বল্পতম সময়ের মধ্যে সেতুর বিস্তারিত ডিজাইন প্রণয়নের লক্ষ্যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি সই হয় এবং প্রকল্পের বিভিন্ন প্যাকেজে বিস্তারিত ডিজাইন চূড়ান্ত করা হয়। ২০১১ সালের এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে সেতু প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাইকা ও ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) সঙ্গে ঋণ চুক্তি সই হয়।

তিনি বলেন, ঠিকাদার নিয়োগে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হলে ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে। প্রকল্পের বিভিন্ন প্যাকেজের নির্মাণ কাজ তদারকির জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা ও আইডিবি ঋণচুক্তি স্থগিত করে। সর্বশেষ ২০১৭ সালে কানাডার টরন্টোর একটি আদালতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হলে বিশ্বব্যাংক এ প্রকল্পে পুনরায় ফিরে আসার ঘোষণা দিলেও দেশ ও জনগণের স্বার্থে বিশ্বব্যাংকের ঋণ না নিয়ে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের সাহসী সিদ্ধান্ত নিই। বহু কাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু প্রকল্পের সূচনালগ্নে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র, চ্যালেঞ্জসমূহের উত্তরণ এবং হার না মানা সুদৃঢ় মনোবলের মাধ্যমে সব প্রতিকূলতাকে জয় করে এ সেতু আজ স্বপ্ন নয়, একটি দৃশ্যমান বাস্তবতা।

শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনে দেশবাসীর সঙ্গে আমিও আনন্দিত, গর্বিত ও উদ্বেলিত। অনেক বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে আর ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে প্রমত্ত পদ্মার বুকে আজ বহু-কাঙ্ক্ষিত সেতু দাঁড়িয়ে গেছে। এ সেতু শুধু ইট-সিমেন্ট-স্টিল-লোহা-কংক্রিটের একটি অবকাঠামো নয় এ সেতু আমাদের অহংকার, আমাদের গর্ব, আমাদের সক্ষমতা আর মর্যাদার প্রতীক। এ সেতু বাংলাদেশের জনগণের।

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে অন্যান্য অঞ্চলের রেল যোগাযোগ সৃষ্টি, ব্যবসা-বাণিজ্যের বিকাশ, কৃষি, ঐতিহ্যবাহী লোকশিল্প, ক্ষুদ্রশিল্প ইত্যাদি ক্ষেত্রে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, জাতীয় ও আঞ্চলিক অর্থনীতির বিস্তৃত ক্ষেত্রেও প্রভাব সৃষ্টিসহ দেশের বিভক্ত দেশের দুটি অঞ্চলকে একীভূত করে রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক, সাংস্কৃতিক এবং সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, পদ্মা সেতুকে ঘিরে সৃষ্ট অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড তরান্বিত হবে। একদিকে যেমন বেকারত্ব হ্রাসে ভূমিকা পালন করবে, তেমনি দারিদ্র্য দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। এ ছাড়াও, সরাসরি সড়ক ও রেল যোগাযোগের ফলে সাধারণ মানুষের বিপুল কর্মঘণ্টার সাশ্রয় হবে এবং জীবনমান উন্নত হবে।

জাতীয় পার্টির সৈয়দ আবু হোসেনের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার অর্থনীতির চাকা সচল রেখে দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখার চেষ্টা করছে।

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল হতে শুরু করেছে।

সরকারি দলের নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নের প্রশ্নের জবাবে সরকার প্রধান বলেন, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী নিজস্ব প্রযুক্তিতে স্বল্প পরিসরে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ বিমান ও ইউএভি (আননেমড এরিয়াল ভেহিকল) তৈরির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কৌশলগত দিক নির্দেশনা অনুযায়ী ধীরে ধীরে এ প্রচেষ্টা সফলতার পথ ধরে একদিন বাংলাদেশ উচ্চ প্রযুক্তির যুদ্ধ বিমান, হেলিকপ্টার ও পাইলটবিহীন বিমান তৈরি করতে সক্ষম হবে।

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments