মাদারীপুর প্রতিনিধি।।
মাদারীপুরে প্রতিদিনি সন্ধ্যা ৭টার পর অভিভাবক ছাড়া কোনো শিক্ষার্থী বা উঠতি বয়সী ছেলেরা বাড়ির বাইরে বের হতে পারবে না এবং চায়ের দোকানগুলোতে কোনো টিভি চলবে না।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শিবচর উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিক, গণ্যমান্য ব্যাক্তিসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশাজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ড. রহিমা খাতুন এ নির্দেশনা দিয়েছেন।
ড. রহিমা খাতুন বলেন, বর্তমান দেশব্যাপী করোনা পরিস্থিতি, কিশোর গ্যাং তৈরি, ধর্ষণ, নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে আমরা কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- সন্ধ্যা ৭ টার পরে কোনো শিক্ষার্থী বা উঠতি বয়সী ছেলেরা বাড়ির বাইরে যেতে পারবে না। যদি একান্তই প্রয়োজন হয় তাহলে অভিভাবকের সঙ্গে বের হতে পারবে।
তিনি বলেন, আমরা দেখি বিভিন্ন চায়ের দোকানে অধিক রাত পর্যন্ত টিভি চলে। আর সেই সাথে দোকানগুলোতে জমে ওঠে আড্ডা। এই আড্ডাতে দেখা যায় বয়ষ্কদের চেয়ে তরুণ ও উঠতি বয়সের যুবকরাই বেশি। চায়ের দোকানে টিভি দেখে চা পান করতে করতে শিক্ষার্থীরা অধিক রাত পর্যন্ত বাড়ির বাইরেই সময় পার করে। এতে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অধিক রাত পর্যন্ত বাড়ির বাইরে থাকার কারণে অনেক শিক্ষার্থীই মাদকের প্রতি ঝুঁকে পড়ছে। দিন দিন মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে জুয়া খেলাসহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে যুক্ত হচ্ছে।
ড. রহিমা খাতুন বলেন, এছাড়া যারা বয়ষ্ক লোক রয়েছে তারাও কিন্তু অধিক রাতে বাড়ি ফেরার কারণে নিজের সন্তানের লেখাপড়ার কোনো খোঁজখবর নিতে পারছে না। তাই পৌরসভার মধ্যে রাত ১০ টা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে রাত ৯ টার মধ্যে সকল দোকানপাট বন্ধ করতে হবে। এসময় শিবচর পৌর মেয়র আওলাদ হোসেন খান ডিসিকে জানান- শিবচরে দোকানপাট রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
জেলা প্রশাসক বলেন, চায়ের দোকানগুলোতে অবশ্যই টিভি চালানো বন্ধ থাকবে। বর্তমানে প্রতিটি ঘরেই টিভি রয়েছে। তাই চায়ের দোকানে বসে টিভি দেখার কোনো যৌক্তিকতা নেই। আমাদের এই যুবসমাজই হচ্ছে শক্তি। এই যুবশক্তি যদি অযথা সময় নষ্ট করে অকালে জীবন ধ্বংস করে দেয় তাহলে সেটা আমাদের দেশের জন্য শুভকর না। তাই আমরা যারা সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তি রয়েছি সকলে যদি উদ্যোগ নেই তাহলেই এসকল সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সম্ভব।
তিনি আরো বলেন, মাদারীপুরের মধ্যে শিবচরের সৌন্দর্য এখন স্বপ্নের মত। পদ্মা নদী বা পদ্মা সেতুর জন্য এখানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনেক সুন্দর। কাজেই এই সৌন্দর্য নিয়ে আমরা যদি পর্যটনের দিকে জোর দেই তাহলে এটি সুন্দর একটি পর্যটন এলাকা বা একটি উপজেলায় রুপ নেবে।
সভায় উপজেলা চেয়ারম্যান আ. লতিফ মোল্লা, পৌরসভার মেয়র মো. আওলাদ হোসেন খান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এম রাকিবুল হাসান, আওয়ামী লীগ জাতীয় কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোসলেম উদ্দিন খান, বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান মোল্লা, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান বিএম আতাউর রহমান, ফাহিমা আক্তার, উপজেলা যুবলীগ সভাপতি ইলিয়াস পাশা, প্রেস ক্লাব সভাপতি একেএম নাসিরুল হক, প্রেস ক্লাব ও দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রদ্যুৎ কুমার সরকারসহ বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি কর্মকর্তা, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার কাউন্সিলর, শিক্ষক, ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এর আগে জেলা প্রশাসক উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ডিজিটাল হাজিরা মেশিনের শুভ উদ্বোধন করেন।