Thursday, April 25, 2024
HomeScrollingবাংলাদেশ আজকে স্বাধীন দেশ কাজেই বাংলাদেশের ক্ষতি ভবিষ্যতে আর কেউ করতে পারবে...

বাংলাদেশ আজকে স্বাধীন দেশ কাজেই বাংলাদেশের ক্ষতি ভবিষ্যতে আর কেউ করতে পারবে না:

বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক দেশ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এ দেশে সব ধর্মের নাগরিকদের অন্যের ধর্মের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে।

তিনি তার দলের নেতাকর্মীদের সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি শান্তি সম্মিলন, শান্তি মিছিল এবং শান্তি সভা করার পরামর্শ দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে। প্রত্যেকটি এলাকায় আমাদের নেতাকর্মীদের নজরদারি বাড়াতে হবে এবং শান্তি সম্মিলন, শান্তি মিছিল, শান্তি সভা করতে হবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে কোনো সংঘাত দেখা না দেয়। এ মাটিতে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সবাই যেন ভালভাবে বাঁচতে পারে।’

প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার বিকেলে কুমিল্লা আওয়ামী লীগের নবনির্মিত ‘অফিস ভবন’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে এসব বলেন।

তিনি গণভবণ থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।

করোনার শিক্ষা ‘যতই সম্পদ হোক দুঃসময়ে তা কাজে লাগে না’ উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, মানুষ মরে গেলে এই সম্পদ পড়ে থাকবে, তা কোনো কাজেই আসবে না। কাজেই যত বেশি দরিদ্র মানুষকে সাহায্য করতে পারব, সেটাই জাতির পিতার এবং ইসলামের শিক্ষা। আর আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠাই হয়েছে মানুষের সেবার জন্য, সে কথাও মনে রাখতে হবে। আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মীকে জাতির পিতার আদর্শ নিয়েই চলতে হবে।

তার সরকার দেশের বেদে শ্রেণি, তৃতীয় লিঙ্গ এমনকি কুষ্ঠরোগীদের জন্যও ঘর-বাড়ি করে দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি যেভাবে মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরও মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখে তাদের সেবা করতে হবে। জাতির পিতার ডাকে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষ কাঁধে অস্ত্র তুলে নিয়ে এ দেশ স্বাধীন করেছে। কাজেই এই স্বাধীনতাকে কোনভাবে ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না।

তিনি বলেন, কুমিল্লার যে ঘটনাটি ঘটে গেছে সেটা সত্যিই খুব দুঃখজনক। কারণ, মানব ধর্মকে সম্মান করাই ইসলামের শিক্ষা। কিন্তু নিজের ধর্ম পালনের অধিকার যেমন সবার রয়েছে, তেমনি অন্যের ধর্মকেও কেউ হেয় করতে পারে না। এটা ইসলাম শিক্ষা দেয় না। আর নিজের ধর্মকে সম্মান করার সঙ্গে সঙ্গে অন্যের ধর্মকেও সম্মান করতে হয়। আর অন্য ধর্মকে হেয় করা হলে নিজের ধর্মকেই অসম্মান করা হয়ে যায়।

শেখ হাসিনা বলেন, কুমিল্লার ঘটনা বিশ্লেষণ করলে আমরা সেটাই দেখবো। আমাদের পবিত্র কোরআন শরীফকে অবমাননা করেছে অন্যের ধর্মকে অসম্মান করতে গিয়ে। এটাই সবচেয়ে দুঃখজনক।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর একটি কথা আইন কেউ হাতে তুলে নেবে না। কেউ যদি অপরাধ করে, সে যেই হোক সে অপরাধীদের বিচার হবে। আমাদের সরকার সে বিচার করবে।

কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার এমপি অনুষ্ঠানে কুমিল্লা প্রান্ত থেকে স্বাগত বক্তৃতা করেন।

স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ কুমিল্লা প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু এই অনুষ্ঠানে নবনির্মিত আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র ও প্রদর্শন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা.) বলেছেন, ধর্ম নিয়ে কেউ বাড়াবাড়ি করবে না। কাজেই আমাদের সবারই সে কথা মেনে চলতে হবে এবং জানতে হবে, তাহলেই সঠিক শিক্ষা আমরা পাব। প্রত্যেকটি ধর্মই শান্তির বাণীর কথা বলে, সবাই শান্তি চায়। কাজেই এ বাংলাদেশে আমরা একটা অসম্প্রদায়িক সমাজে বসবাস করি, যেখানে সবার ধর্মের সঙ্গে আমাদের সম্প্রীতি থাকবে এবং এই সম্প্রীতি নিয়েই আমাদের চলতে হবে। কেননা যুগ যুগ ধরেই এ দেশে সব ধর্মের মানুষ এক সঙ্গে বসবাস করে আসছে।

শেখ হাসিনা মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের আত্মত্যাগ স্মরণ করে বলেন, সেখানে কোনো ধর্ম দেখে নয়, যারা রক্ত দিয়েছেন তাদের রক্তের সঙ্গে সব ধর্ম একাকার হয়ে মিশে গেছে। আর এটা সবাইকে মনে রাখতে হবে। বাংলাদেশ সকল ধর্মের, সকল বর্ণের এবং সব শ্রেনী পেশার মানুষই একটা মর্যাদা ও সম্মান নিয়ে চলবে।

বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্থ করার জন্যই মাঝে মাঝে এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর প্রচেষ্টা নেয়া হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, কুমিল্লার ঘটনা ঘটার পর পরই পীরগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গায় যে ঘটনা ঘটেছে, ঘরবাড়ি পুড়িয়েছে সঙ্গে সঙ্গে তাঁবু টানিয়ে তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শুকনো খাবার থেকে শুরু করে রান্না করা খাবার বিতরণ, কাপড়-চোপড় এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং যাদের এ ধরনের ক্ষতি হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত সবাইকেই আমরা ঘর-বাড়ি তৈরি করে দেব। ইতোমধ্যে সে ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি।

আওয়ামী লীগ এমন একটা সংগঠন যে সংগঠন জাতির পিতা করে দিয়ে গিয়েছেন, যে সংগঠন এ দেশের স্বাধীনতা অর্জন করেছে। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই দেশের উন্নতি হয়, মানুষের কল্যাণ হয়। অথচ ’৭৫ এর পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা মানুষকে কিছু না দিয়ে নিজেদের আখের গুছিয়েছে। কাজেই আমরা চাই সারা বাংলাদেশের প্রত্যেক জেলায় আওয়ামী লীগের একটা অফিস হোক।

কুমিল্লা খাদ্যে উদ্বৃত্ত অঞ্চল উল্লেখ করে তিনি নদী ড্রেজিং এবং জলাধার সংস্কারসহ এর অবকাঠামো উন্নয়নের বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরে বলেন, আমরা সব ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং এটা আমাদের অব্যাহত থাকবে। আর গ্রামগুলোতে যারা বসবাস করেন তারা যেন শহরের সব ধরনের নগরিক সুবিধা পান তার ব্যবস্থা সরকার করে দিচ্ছে।

কুমিল্লাকে বিভাগে রূপান্তরিত করার দাবির প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ফরিদপুর এবং এর আশপাশের জেলাগুলোকে নিয়ে ‘পদ্মা’ এবং কুমিল্লা ও তার আশ পাশের জেলা নিয়ে ’মেঘনা’ বিভাগ প্রতিষ্ঠার ও প্রস্তাব করেন।

আওয়ামী লীগকে ’৭৫ এর পর সবচেয়ে বেশি নির্মম নির্যাতনের শিকার রাজনৈতিক সংগঠন হিসেব উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেখানেই মানুষের ওপর কোনো নির্যাতন হয় আওয়ামী লীগ পাশে থাকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ও আওয়ামী লীগ মানুষের পাশে থাকে। আর বিএনপি-জামায়াতের কাজই হচ্ছে ধ্বংস করা। তাদের অগ্নিসন্ত্রাসে কত মানুষ জীবন দিয়েছে, কত নেতাকর্মীকে তারা হত্যা করেছে, অবর্ণনীয় অত্যাচার করেছে।

তার সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়া আজ তৃণমূলের মানুষ পেতে শুরু করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বলেছিলেন,‘ আমাদের মাটি আছে, মানুষ আছে তা দিয়েই আমরা দেশকে গড়ে তুলব’ সেটাতেই আমরা বিশ্বাস করি। কারো কাছে আমরা হাত পেতে চলব না। কারণ, ভিক্ষুক জাতির কোনো ইজ্জত থাকেনা-সে শিক্ষাও জাতির পিতাই দিয়ে গেছেন।

তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে দেশের যখন উন্নয়ন হচ্ছে একটা শ্রেণি আছে তারা কখনো এটা মানতে পারে না। বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে সম্মান নিয়ে চলবে এটা তাদের কাছে পছন্দনীয় নয়। আর বিএনপি-জামায়াতের কখনো এটা পছন্দ হবে না, কারণ খালেদা জিয়ার অন্তরে সবসময়ই ছিল ‘পেয়ারে পাকিস্তান’।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আজকে স্বাধীন দেশ। কাজেই বাংলাদেশের ক্ষতি ভবিষ্যতে আর কেউ করতে পারবে না। আমরা কখনও আর কারো অধীন হব না। স্বাধীন জাতি হিসেবে আমরা সারাবিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবো। সেই কথা সবাইকে মনে রাখতে হবে।

শেখ হাসিনা আরো বলেন, আওয়ামী লীগ গণমানুষের সংগঠন এবং আওয়ামী লীগ এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করবে, দেশের মানুষকে উন্নত জীবন দেবে, দেশের মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করবে। আর মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে আমরা মাথা উঁচু করে চলব, যেটা জাতির পিতা চেয়েছিলেন।

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments