Thursday, March 28, 2024
HomeScrollingবাঁচতে লাফ দিই তৃতীয় তলা থেকে

বাঁচতে লাফ দিই তৃতীয় তলা থেকে

ডেস্ক রিপোর্ট।। 

বিকেল সাড়ে ৫টা। সেজান সুজ কারাখানার নিচতলায় তখন দাউদাউ করে আগুন জ্বলছিল। তৃতীয় তলায় কাজ করছিল ফাতেমা (১৫) আর তার সহকর্মী। তখনো তারা টের পায়নি আগুন লাগার বিষয়টি। হঠাৎ পেছনে ফিরে ধোঁয়া আর আগুনের কুণ্ডলী দেখতে পায় ফাতেমার সহকর্মী। মুহূর্তেই ধোঁয়ায় দম বন্ধ হওয়ার পরিস্থিতি। শুরু হয় মৃত্যুপুরী থেকে বেঁচে আসার যুদ্ধ।

একপর্যায়ে তৃতীয় তলা থেকে লাফ দেয় ফাতেমা। আগুনে পুড়ে মরার চেয়ে নিচে লাফিয়ে পড়াই যেন তার কাছে শ্রেয় ছিল। শুধু ফাতেমাই নয়, তার মতো শত শত শ্রমিক তখন লাফ দেয় নিচে। অনেকে বাঁচার আশায় ৬ তলার ছাদ থেকেও লাফিয়ে পড়ে পাশের টিনশেডের ওপর, কেউবা সরাসরি নিচে।

মৃত্যুপুরী থেকে বেঁচে আসা ফাতেমা সেই ভয়ংকর স্মৃতি মনে করে আঁতকে ওঠে। অসুস্থ ও বিধ্বস্ত ফাতেমা বলে, আমি ও আমার সঙ্গে একজন তৃতীয় তলায় বোতল ছিদ্র করার কাজ করছিলাম। তখনো জানি না যে আগুন লেগেছে। হঠাৎ আমার সঙ্গে থাকা একজন পেছনে দেখে ধোঁয়া আর আগুন। আমরা তখন ছোটাছুটি করতে থাকি। মুহূর্তের মধ্যেই আমরা ধোঁয়ার কারণে শ্বাস নিতে পারছিলাম না, দম বন্ধ হয়ে আসছিল।

সে আরও বলে, প্রথম তলায় আগুন লাগায় নিচেও নামতে পারছিলাম না। আমাদের নামার জন্য রশি বা মই কিছুই দেওয়া হয়নি। এ সময় দেখলাম বিল্ডিংয়ের সামনের বড় শাটার গেট দিয়ে অনেকেই লাফিয়ে নিচে পড়ছে। আমি ভাবলাম, আগুনে না পুড়ে মরে নিচে পড়েই মরি। তাই আগুন থেকে বাঁচতে তৃতীয় তলা থেকে নিচে লাফ দিয়ে অজ্ঞান হয়ে যাই।

কথা বলতেও বেশ কষ্ট হচ্ছিল ফাতেমার। লাফ দেওয়ার কারণে তার পায়ের বেশ কিছু অংশ কেটে ও থেঁতলে গেছে। বুকে চোট লাগায় এখন শাস নিতে কষ্ট হয় তার। চিৎকার করায় গলাও ব্যথা করছে। ফাতেমা জানায়, একটি ছেলে তার মাথায় পানি ঢেলে জ্ঞান ফেরানোর পর সে তার মামাতো বোনের খোঁজ করতে থাকে। সে তখন চতুর্থ তলার সেই মৃত্যুপুরীতে আটকা ছিল।

ফাতেমা দাবি করে, চতুর্থ তলা থেকে নামার কলাপসিবল গেটটি তখন তালাবদ্ধ ছিল। মালিকের নির্দেশে ওই ফ্লোরের গেটে তালা লাগিয়ে রাখা হয়। এ সময় কারখানার কর্মকর্তারা তাদের জানান, চতুর্থ তলার এসি রুমে ‘ওরা’ নিরাপদে আছে, ওখানে কিছু হবে না। কিন্তু পুরো ফ্লোরেই তখন আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়ে ছাই করে দিয়েছে সব। সেখানে থাকা কোনো জীবিত শ্রমিক আর বাঁচতে পারেনি।

ফাতেমা আরও দাবি করে, ছাদ থেকে ও বিভিন্ন ফ্লোর থেকে নিচে লাফিয়ে পড়া অনেকেই মারা গেছে। সে জানায়, বলা হয়েছিল প্রথমে ২ জন লাফ দিয়ে মারা গেছে। কিন্তু আমার চোখের সামনে অনেকেই লাফ দিয়ে মারা গেছে। ছাদ থেকে যারা লাফ দিয়েছে, তাদের বেঁচে থাকার কথা নয়।

উল্লেখ্য, চতুর্থ তলার যে ফ্লোর থেকে ৪৯টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল, তাদের সবাই একটি স্থানেই জড়ো হয়েছিল বলে জানিয়েছিলেন উদ্ধারকারীরা। ধারণা করা হচ্ছে, ফাতেমার এই বক্তব্যই ছিল সেই ৪৯ হতভাগ্যের নিয়তি।

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments