Wednesday, April 17, 2024
HomeScrollingবঙ্গবন্ধু ও আমার বাবা মাদারীপুুর যে স্কুলে পড়েছে একই স্কুলে লেখাপড়া সৌভাগ্য...

বঙ্গবন্ধু ও আমার বাবা মাদারীপুুর যে স্কুলে পড়েছে একই স্কুলে লেখাপড়া সৌভাগ্য হয়েছে- ড. মোজাম্মেল হক খান

স্টাফ রিপোর্টার-লাইভনিউজ24বিডি

প্রত্যেক দুর্নীতিবাজই দুদকের দৃষ্টিতে সমান। অপরাধ প্রমাণিত হলে কেউ ছাড় পাবেন না। আপনারা যাদের প্রভাবশালী হিসেবে চিহ্নিত করতে চান এমন অনেকেই দুদকের জালে ধরা পড়েছেন। তারা শাস্তির আওতায় এসেছেন, জেলও খাটছেন। দুর্নীতিবাজ যে-ই হোন না কেন, তাকে কোনো একসময় আইনের হাতে ধরা দিতেই হবে। তারা সমাজেও ঘৃণিত, আইনের চোখেও অপরাধী। দুদক প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজ বলতে আলাদা করে কাউকে বিবেচনা করে না— দুদক কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান।

মোজাম্মেল হক খান ২০১৮ সালের ২ জুলাই থেকে দমন কমিশনে (দুদক) কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে দায়িত্ব পালন করেছেন জনপ্রশাসনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও সচিব হিসেবে। তিনি মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন জেলায় জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক, রাষ্ট্রপতির একান্ত সচিব, উপসচিব, যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব হিসেবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকল্যাণে বিএসএস ও এমএসএস ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়া মিশরের কায়রো ডেমোগ্রাফিক সেন্টার থেকে জনসংখ্যা ও বিকাশে এসডি এবং জনপ্রশাসনে পিএইচডি শেষ করেন। তিনি বিসিএস ১৯৮২ ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা।

দুদকের কমিশনার হিসেবে চার বছর পার করেছেন। এই সময়ে সফলতা ও ব্যর্থতা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছেন, পাশাপাশি শুনিয়েছেন নিজের জন্মস্থান, ছেলেবেলা ও বেড়ে ওঠার গল্প।

dhakapost
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান বিভাগের কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান

মোজাম্মেল হক খান : আমার বাবা পড়েছেন মাদারীপুরের ইসলামিয়া হাই স্কুলে। তিনি যে স্কুলের ছাত্র, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুও সেই স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়েছেন। মাদারীপুরে ইসলামিয়া হাই স্কুলের পাশাপাশি আরও একটি হাই স্কুল ছিল। পরবর্তীতে ওই দুই স্কুল এক হয়ে ইউনাইটেড ইসলামিয়া হাই স্কুল হয়। যা পরে সরকারি হয়। আমার ওই স্কুলে লেখাপড়া করার সৌভাগ্য হয়েছে। সেই হিসেবে বাবা ও বঙ্গবন্ধুর স্কুলে আমার পড়া হয়েছে। এটা আমার কাছে অত্যন্ত আনন্দ ও গর্বের বিষয়।

 বাংলাদেশসহ বিশ্ব একটি সংকটময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। করোনা মহামারির পর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। সবকিছু মিলিয়ে একটি কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি আমরা। এরই মধ্যে বেশ জোরেশোরে আলোচিত হচ্ছে দুর্নীতি প্রতিরোধের বিষয়টি। বিশেষ করে সরকারের বিশেষ বিবেচনায় নেওয়া মেগা প্রকল্পগুলো, এখানেও দুর্নীতির গন্ধ আছে। দুর্নীতি প্রতিরোধ সংস্থা হিসেবে এসব প্রকল্পে দুদকের বড় ভূমিকা রাখা উচিত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। আপনার মতামত কী?

মোজাম্মেল হক খান : আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অস্থিরতার প্রভাব আমাদের দেশেও পড়েছে। আমাদের খুব ভেবেচিন্তে পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে। তারপরও দেশের উন্নয়নে সরকারিভাবে বড় বড় প্রকল্প চালিয়ে নিতে হচ্ছে। বিশাল অঙ্কের বাজেটের এসব উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থের কোনো ধরনের অপচয় বা দুর্নীতির বিষয় যেন না আসে সে ব্যাপারে দুদক সদা সজাগ দৃষ্টি রাখছে। যেকোনো ধরনের অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ঢাকা পোস্ট : উন্নত দেশগুলোতে দুর্নীতি প্রতিরোধ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি শক্তিশালী রূপ আমরা দেখতে পাই। এ বিষযয়ে কোনো বিশেষ পরিকল্পনা আছে কি না? ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুদককে কোথায় দেখতে চান আপনি?

dhakapost
মেগা প্রকল্পগুলোতে অর্থের কোনো ধরনের অপচয় বা দুর্নীতির বিষয় যেন না আসে সে ব্যাপারে দুদক সদা সজাগ দৃষ্টি রাখছে—কমিশনার মোজাম্মেল হক খান / ছবি- সংগৃহীত

মোজাম্মেল হক খান : সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন, উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, প্রভৃতি কারণে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিনিয়ত দুর্নীতির ধরন ও কৌশল পরিবর্তন হচ্ছে। উন্নত বিশ্ব সমানতালে তাদের প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধন করে চলেছে। সেই তুলনায় আমরা অনেকটা পিছিয়ে। অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সবাই তৎপর।

কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবে দুদকের অটোমেশন, কার্যক্রম দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা ও তদারকির জন্য ওয়েবভিত্তিক সফটওয়্যার, ফাইল ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সফটওয়্যার তৈরিসহ অত্যাধুনিক ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি কর্মকর্তাদের দেশ-বিদেশে আধুনিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমও চলমান। এগুলো শেষ হলে নতুন মাত্রা পাবে দুদক, সক্ষমতাও বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। কমিশন আশ্বস্ত করতে পারে যে দেশে দুর্নীতি দমন, নিয়ন্ত্রণ, প্রতিরোধ এবং বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মাঝে শুদ্ধাচার বিকাশে দুদক সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ অব্যাহত রাখবে।

dhakapost
দুদকের প্রধান কার্যালয়ে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখছেন কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান / ছবি- সংগৃহীত

বিদ্যমান মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে সম্পৃক্ত ২৭টি অপরাধের মধ্যে শুধু একটির (দুর্নীতি ও ঘুষ) অনুসন্ধান ও তদন্তের ক্ষমতা রয়েছে দুদকের। অথচ মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের শুরুতে সম্পৃক্ত সব অপরাধ অনুসন্ধান ও তদন্তের ক্ষমতা ছিল সংস্থাটির। ইতোমধ্যে দুদকের পক্ষে মহামান্য হাইকোর্টের একটি পর্যবেক্ষণও রয়েছে। এ বিষয়ে নতুন কোনো অগ্রগতি আছে কি না?

মোজাম্মেল হক খান : মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, দুদক আইনের তফসিলভুক্ত মানিলন্ডারিং সংশ্লিষ্ট যেকোনো অপরাধ অনুসন্ধান ও তদন্ত করতে পারবে দুদক। সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে দুর্নীতি দমন কমিশন মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা, ২০১৯ সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এ অবস্থায় কমিশনের সিদ্ধান্তের আলোকে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ২ (ঠ) ধারা সংশোধন করে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা, ২০১৯ এর তফসিলে বর্ণিত অনুসন্ধান ও তদন্তের জন্য নির্ধারিত সংস্থার তালিকার দলিল-দস্তাবেজ জালকরণ, প্রতারণা, জালিয়াতি, দেশি ও বিদেশি মুদ্রাপাচার, চোরাচালান ও শুল্ক সংক্রান্ত অপরাধ, কর সংক্রান্ত অপরাধ, পুঁজিবাজার সংক্রান্ত অপরাধ (ইনসাইডার ট্রেডিং অ্যান্ড মার্কেট ম্যানিপুলেশন) থেকে উদ্ভূত মানিলন্ডারিং তদন্তের এখতিয়ার অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পাশাপাশি দুদককেও দেওয়ার লক্ষ্যে ওই বিধিমালা (তফসিলসহ) সংশোধনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অনুরোধ করা হয়। এ সংক্রান্ত চিঠি কমিশন থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করে বিষয়টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে।

বড় দুর্নীতিবাজদের ধরতে পারে না দুদক— এমন অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়। চুনোপুঁটিদের ধরতে এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা বা চার্জশিট দিতে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় দুর্নীতিবিরোধী প্রতিষ্ঠানটিকে। এ বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাচ্ছি…

dhakapost
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় অবস্থিত দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয় / ছবি- সংগৃহীত

মোজাম্মেল হক খান : আইনের দৃষ্টিতে সবাই অপরাধী। কে বড়, কে প্রভাবশালী তা বিবেচ্য নয়। সব দুর্নীতিবাজই কম-বেশি প্রভাবশালী হয়ে থাকেন। তবে তা দুদকের বিবেচ্য নয়। দুদক তার আইন অনুযায়ী অনুসন্ধান/তদন্ত পরিচালনায় সর্বশক্তি নিয়োগ করে থাকে। সব ধরনের প্রভাবমুক্ত থেকে, আইনের ম্যান্ডেট অনুসরণ করে দুদক তার কার্যক্রম পরিচালনায় সচেষ্ট আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।

ছোট-বড় কোনো দুর্নীতিবাজই ছাড় পাবেন না। দুর্নীতির সাজা তাদের ভোগ করতেই হবে। অনেক বড় বড় দুর্নীতিবাজ দুদকের জালে আটকা পড়েছেন— এমন নজিরও আছে। দুদক প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজ বলতে আলাদা করে কাউকে বিবেচনা করে না। প্রত্যেক দুর্নীতিবাজই দুদকের দৃষ্টিতে সমান। অপরাধ প্রমাণিত হলে কেউ ছাড় পাবেন না।

আপনারা যাদের প্রভাবশালী হিসেবে চিহ্নিত করতে চান এমন অনেকেই দুদকের জালে ধরা পড়েছেন। তারা শাস্তির আওতায় এসেছেন এবং জেলও খাটছেন। এর মধ্যে বর্তমান ও সাবেক সংসদ সদস্য, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ পদের অধিকারীগণও রয়েছেন। সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকাররাও আছেন। সুতরাং দুর্নীতিবাজ যে-ই হোন না কেন, তাকে কোনো একসময় আইনের হাতে ধরা দিতেই হবে। তারা সমাজে ঘৃণিত, আইনের চোখেও অপরাধী

 

#সংগ্রহিত।।

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments