ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের মধ্যে ফের সংঘর্ষের খবর পাওয়া গিয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করলে আবারও মুখোমুখি অবস্থানে যায় শিক্ষার্থী-ব্যবসায়ীরা।
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের মারমুখী অবস্থানের কারণে সকাল থেকে সায়েন্স ল্যাব থেকে নীলক্ষেত সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ ঘটনায় ওই এলাকার দোকানপাটও বন্ধ রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান নিলেও ব্যবসায়ীরা ভবনের ওপর থেকে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করছে। এ সময় শিক্ষার্থীদের হামলার বিচারের দাবিতে স্লোগান দিতে শোনা যায়।
ব্যবসায়ী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে বেলা ১০টা ৪০ মিনিটের দিকে শিক্ষার্থীদের পিছু হটতে দেখা যায়। এ সময় ব্যবসায়ীরা ঢাকা কলেজের সামনে অবস্থান নেন।
ঢাকা নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন বলেন, এ ঘটনার সমাধানে আমরা চেষ্টা করছি। এখানে কিছু শিক্ষার্থীর ঢাকা কলেজ এবং রাজনৈতিক দলের পরিচয় দিয়ে সুবিধা নেওয়ার প্রবণতা যেমন রয়েছে, তেমনি কিছু ব্যবসায়ী চাইলেই এসব ঝামেলা এড়িয়ে চলতে পারেন। দুই পক্ষেরই দোষ রয়েছে।
এর আগে সোমবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ‘কথা-কাটাকাটির’ জেরে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এ ঘটনায় মিরপুর সড়কটি রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। ঘটনার পুরো সময়ে এই সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। সংঘর্ষ চলাকালে গোটা এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের অন্তত ১০-১২ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে তিন শিক্ষার্থীর গায়ে, বুকে ও মাথায় গুলি লেগেছে। অন্যদিকে, শিক্ষার্থীদের ছোড়া ইটপাটকেলে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
পুলিশ, ঢাকা কলেজ সূত্র ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা কলেজের তিন ছাত্রলীগ নেতা নিউ মার্কেটে একটি রেস্টুরেন্টে খেতে যান। খাওয়ার পর তারা বিল না দিয়ে সেখান থেকে উঠে আসার চেষ্টা করেন। এ সময় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাদের তর্কাতর্কি এবং ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে ওই দোকানিকে মারধর কারণে তিন ছাত্রলীগ নেতা। এরপর ব্যবসায়ীরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের মারধর করেন। পরে ওই তিন শিক্ষার্থী ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসে ফিরে যান এবং তাদের সহপাঠীদের নিয়ে এসে ব্যবসায়ীদের ওপর হামলা চালান।
নিউমার্কেট জোনের এডিসি হারুন অর রশীদ বলেন, সংঘর্ষ শুরুর পর থেকেই আমরা এখানে রয়েছি। দুই পক্ষই ইটপাটকেল ছোড়ে। পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেছে আমাদের পুলিশের সদস্যরা। শিক্ষার্থীরা পুলিশের ওপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ করেছেন। পুলিশ শুধু তাদের শান্ত করার জন্য টিয়ারগ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে।
রমনা জোনের ডিসি সাজ্জাদুর রহমান বলেন, আমরা জানতে পেরেছি ঢাকা কলেজের কয়েকজন ছাত্র নিউমার্কেটে যায়। যে দোকানে তারা গিয়েছিল সেই দোকানের কর্মচারীর সঙ্গে তাদের তর্ক হয়। শিক্ষার্থীদের ভাষ্যমতে, সেই কর্মচারী তাদের গায়ে হাত তোলে। পরে শিক্ষার্থীরা হলে ফিরে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য দলবল নিয়ে নিউমার্কেট এলাকায় আসে। এ সময় তারা প্রথমে নিউ মার্কেটের ৪ নং গেট ও পরে ২ নং গেট ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে। দুই নং গেট ভেঙে ভেতরে কয়েকজন ঢুকেও পড়ে। পরে আমরা তাদেরকে বুঝিয়ে হলে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করি।
এ ঘটনায় কলেজ প্রশাসন সকল প্রকার ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রেখেছে। রাতের ঘটনার পরপরই ঢাকা কলেজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে একটি ঘোষণা দেন ঢাকা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। ঘোষণায় উল্লেখ করা হয়, ‘অনিবার্য কারণে ১৯ এপ্রিল, মঙ্গলবার ঢাকা কলেজের উচ্চমাধ্যমিক ও অনার্স-মাস্টার্স শ্রেণির সকল ক্লাস ও পরীক্ষাসমূহ স্থগিত করা হলো। সকল শিক্ষককে সকাল ১০টার মধ্যে কলেজে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করা হলো।,
সুত্র- দেশরুপান্তর