Saturday, April 20, 2024
HomeScrollingতালেবানদের মধ্যে গভীর বিভাজন

তালেবানদের মধ্যে গভীর বিভাজন

অনলাইন ডেস্ক।।

তালেবান নেতৃত্বের মধ্যে যে বিভেদের খবর পাওয়া গেছে, তার ফলে গত মাসে আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করা এই ইসলামপন্থী গোষ্ঠীর ঐক্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এই মাসের গোড়ার দিকে তালেবানের উপ-প্রধানমন্ত্রী মোল্লা আবদুল গনি বারাদার জনসম্মুখ থেকে আড়ালে চলে গেলে তালেবানের ঐক্য নিয়ে সন্দেহ আরও বেড়ে যায়।

এরপর তাকে হত্যা করা হয় বলেও রিপোর্ট আসে।

তবে এরপর তিনি একটি অডিও বার্তা ছাড়েন এবং একটি ভিডিওতেও তাকে দেখা গেছে। তালেবানের মধ্যে কোনো বিভেদ এবং দ্বন্দ্ব সংঘাতও অস্বীকার করেন তিনি।

গত সোমবার জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি বৈঠকে মোল্লা বারাদারের অংশ নেওয়ার ছবিও প্রকাশ করা হয়।

যাইহোক, তবে, কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক সূত্রগুলো কাতারের গণমাধ্যম আল জাজিরাকে জানিয়েছে যে, তালেবান নেতৃত্বের মধ্যে মতবিরোধ ও বিভক্তি খুবই বাস্তব একটি বিষয়। তারা আরও বলেন, যদি বিশৃঙ্খলা বাড়তে থাকে তবে তা আফগান জনগণের জন্য আরও সমস্যার সৃষ্টি হবে।

গত কয়েক বছর ধরে তালেবানের সংবাদ দেওয়া একজন লেখক এবং রিপোর্টার বলেন, তালেবানের মধ্যে এই বিভাজনগুলো রাজনৈতিক-সামরিক বিভক্তির ফল।

তিনি বলেন, ‘তালেবানের কট্টরপন্থীরা মনে করছে যে, ২০ বছরের লড়াইয়ের জন্য তাদের পুরষ্কার দেওয়া উচিৎ’।

তালেবানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কয়েক দশক ধরে সম্পর্ক থাকা একটি রাজনৈতিক সূত্রও এ ব্যাপারে একমত হয়েছে। তিনি বলেন, সেই বিভাজনের প্রভাব ক্ষমতার অন্দর থেকে শুরু করে রাস্তা পর্যন্ত বিস্তৃত। তালেবান যোদ্ধারা প্রধান শহরগুলোর প্রাক্তন সরকারি কর্মকর্তাদের এবং তাদের পরিবারের মালামাল জোর করে কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে।

‘এই মুহূর্তে, তারা যা করছে তা হল, সাবেক সরকারের লোকদের গাড়ি এবং বাড়ি দখল করে নেওয়া’।

সাবেক কর্মকর্তাদের পরিবার আল জাজিরাকে জানিয়েছে যে, তালেবান যোদ্ধারা তাদের ভাড়া করা বাড়ি এবং তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি সহ তাদের সব জিনিসপত্র দখলের চেষ্টা করেছে।

অথচ তালেবানের তথ্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপমন্ত্রী জাবিউল্লাহ মুজাহিদ কাবুল দখলের দুই দিন পর বলেছিলেন যে, ‘আমরা সবাইকে নির্দেশ দিয়েছি, তারা যেন কারও বাড়িতে প্রবেশ না করে, হোক তা বেসামরিক বা সামরিক’। ১৭ আগস্টের ওই একই মিডিয়া ব্রিফিংয়ে মুজাহিদ বলেছিলেন, ‘আমাদের এবং আগের সরকারের মধ্যে বিশাল পার্থক্য রয়েছে’।

যা হোক, যারা আফগান পরিস্থিতির সঙ্গে পরিচিত তাদের মতে, বর্তমান তালেবান নেতৃত্ব প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আশরাফ গনির সরকারের মতোই নানা বিভক্তির মুখোমুখি হচ্ছে।

আল জাজিরার সঙ্গে কথা বলার সূত্রগুলো বলেছে, অন্যান্য আফগান সরকারের মতোই তালেবানদের মধ্যেও ব্যক্তিগত বিভক্তি রয়েছে। কিন্তু তালেবানে শুধু মাত্রাতিরিক্ত উচ্চাভিলাষী সদস্যদের বা রাজনৈতিক মতাদর্শের বিভক্তিই নয় বরং আরও অনেক বেশি মৌলিক বিভাজনও রয়েছে।

বর্তমানে তালেবানের একটি অংশ আগের সরকারের লোকদের সম্পদ লুণ্ঠনে ব্যস্ত। আর আরেকটি অংশ আছে যারা আফগান জনগণ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আশঙ্কা দূর করতে চায় এমন রাজনীতিক।

নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই প্রতিবেদক বলেন, তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা মুহাম্মদ ওমরের ছেলে এবং বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোল্লা মুহাম্মদ ইয়াকুব তালেবানের কট্টর ও সেনা-কেন্দ্রিক গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তিত্বদের একজন।

কিন্তু মোল্লা বারাদার এবং পররাষ্ট্র বিষয়ক উপমন্ত্রী শের মুহাম্মদ আব্বাস স্তানিকজাই আরও রাজনৈতিক চিন্তাশীল শাখার প্রতিনিধিত্ব করেন, যারা উদার এবং আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র তৈরি করতে চেয়েছিলেন।

দুই গোষ্ঠীর বিতর্কের আরেকটি বিষয় হল, আঞ্চলিক প্রতিবেশী পাকিস্তান ও ইরানের ভূমিকা কী হবে তা নিয়ে।

কট্টরপন্থীদের একটা অংশ আবার ইরানের দিকে ঝুঁকে পড়েছে, যাদেরকে পাকিস্তান একসময় গ্রেপ্তার করেছিল।

মন্ত্রিসভা ঘোষণার ঠিক আগে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সের (আইএসআই) প্রধান জেনারেল ফয়েজ হামিদও কাবুল সফরে গিয়ে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকারের আহ্বান জানিয়েছিলেন, শিয়া মুসলিম এবং নারীদেরও সরকারে রাখার কথা বলেছিলেন, কিন্তু কট্টরপন্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করেন।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও যখন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকারের আহ্বান জানান, তখন তালেবান নেতা মোহাম্মদ মবিন জাতীয় টেলিভিশনে খানের সমালোচনা করে বলেন, তালেবান কাউকে অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকারের আহ্বান জানানোর অধিকার দেয়নি এবং আফগানিস্তান তার নিজের মতো করেই সরকার গঠনের অধিকার রাখে।

কয়েক সপ্তাহ ধরে তালেবানরা সাবেক রাষ্ট্রপতি হামিদ কারজাই সহ সাবেক প্রধান নির্বাহী আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ এবং গুল আঘা শেরজাইয়ের মতো প্রাক্তন নেতাদেরও নজরবন্দী করে রেখেছে, যারা নানগারহার ও কান্দাহার প্রদেশের গভর্নর ছিলেন।

অনেক আফগান ধারণা করেছিল যে এই নেতারাও বহুল প্রতিশ্রুত অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকারে জায়গা পাবেন। কিন্তু, প্রাক্তন একজন কূটনীতিক বলছেন যে, তালেবানের কট্টরপন্থীরা শুরু থেকেই বলছিল যে, পূর্ববর্তী প্রশাসনে ‘এমনকি একটি দিন’ কাটিয়েছে এমন কাউকেও নতুন তালেবান সরকারে আসন দেওয়া হবে না।

তবে গত মঙ্গলবার তালেবান তাদের মন্ত্রিসভার যে অতিরিক্ত সদস্যদের নাম ঘোষণা করেছে, তাতে দেখা যায় যে তারা প্রশাসনে বৈচিত্র্য আনা এবং যোগ্যতার প্রশ্ন বিবেচনায় রেখেছিল।

নতুন এই উপমন্ত্রীদের মধ্যে পাঞ্জশির এবং বাঘলানের কয়েকজন নেতাকেও রাখা হয়েছে। পাঞ্জশির এবং বাঘলানে তালেবানের বিরুদ্ধে এখনো বিদ্রোহ চলছে।

তালেবান তাদের সরকারে তাজিক, উজবেক এবং তুর্কমেনদের জন্য জায়গা রাখলেও তাদের সরকারে এখনও শিয়া, হাজারা বা অন্য কোন সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর জায়গা হয়নি।

সূত্র বলছে, সব সিদ্ধান্ত আসছে মূলত কান্দাহার ভিত্তিক একটি গোপন শুরা বা উপদেষ্টা পরিষদের কাছ থেকে। তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা হায়বাতুল্লাহ আখুন্দজাদাও সেখানেই রয়েছেন। এই গোপন উপদেষ্টা পরিষদই এখন আফগানিস্তানের প্রকৃত সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী।

বেশ কিছু তালেবান নেতাও নতুন প্রশাসনে তাদের অবস্থান নিয়ে বিরক্ত।

কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, কাবুলের রাস্তায় তাদের বর্তমান কর্মকাণ্ডের ভিত্তিতে আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, পদমর্যাদা ও আঞ্চলিক এবং ব্যক্তিগত বিরোধের জেরে রাজধানী এবং অন্যান্য প্রদেশে তালেবানরা সংঘর্ষ বা যুদ্ধের দিকে যেতে পারে।

‘রাজনৈতিক আসনের জন্য লড়াই করা এক জিনিস, কিন্তু যখন তাদের সৈন্যরা তাদের দীর্ঘদিনের বিরোধের ভিত্তিতে যুদ্ধ শুরু করবে, তখন কোথাও আর নিরাপত্তা থাকবে না’।

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments