Tuesday, April 23, 2024
HomeScrollingজীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে নাসিম

জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে নাসিম

পরপর তিনবার নমুনা পরীক্ষা করে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিমের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়নি। তিনি এখন পুরোপুরি করোনামুক্ত। তবে নাসিম এখনো হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রেই (আইসিইউ) আছেন। অবস্থার তেমন কোনো পরবির্তন হয়নি, জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে তিনি। তাকে সিঙ্গাপুরে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।

নাসিমের পরিবারের একটি সূত্র জানায়, উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে তাদের আছে। মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ মেনে এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় খোঁজ নিতে শুরু করেছেন পরিবারের সদস্যরা। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসার কাগজপত্র পাঠিয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে।

দ্বিতীয় দফায় পর্যবেক্ষণের ৭২ ঘণ্টা শেষে বৃহস্পতিবার নাসিমের চিকিৎসায় নতুন সিদ্ধান্ত নেবে মেডিকেল বোর্ড।

বর্তমান শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেওয়াটা ঝুঁকিপূর্ণ হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. রাজিউল হক। তিনি বলেন ‘গত দুই থেকে তিন দিন মোহাম্মদ নাসিমের ব্লাড প্রেশার স্বাভাবিক ছিল। তবে, আজকে উঠা-নামা করছে। মোহাম্মদ নাসিমের রক্তের একটা পরীক্ষা করা হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, রক্ত জমাট বাঁধতে অসুবিধা হচ্ছে। এখনও তিনি নিজে থেকে শ্বাস নিতে পারছেন না। সব মিলিয়ে অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে।’

উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শুনেছি তাকে বিদেশে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। কিন্তু এই অবস্থায় তাকে বিদেশে নেওয়াটা ঝুঁকিপূর্ণ হবে।’

মোহাম্মদ নাসিমের শারীরিক অবস্থা এখন খুবই সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছেন তার চিকিৎসায় গঠিত ১৩ সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া। বলেন, তার চিকিৎসা চলতে থাকবে, তবে তার অবস্থার আরও অবনতি ঘটেছে।

তাকে পরিবার বিদেশ নিতে যাচ্ছে, চিকিৎসকরা কী পরামর্শ দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা ( পরিবার) কোনও সিদ্ধান্ত নেননি। তারা যোগাযোগ করছেন, কিন্তু কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। আর আমাদের পরামর্শ হচ্ছে, তারা (পরিবার) যদি চান, নিতে পারেন। কিন্তু প্রোপার ব্যবস্থা করে নিতে হবে, তার অবস্থা খুবই ক্রিটিক্যাল।

প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নাসিম গত আট দিন ধরে রাজধানীর শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। জ্বর ও কাশির মত উপসর্গ নিয়ে গত ১ জুন ওই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর পরীক্ষায় মোহাম্মদ নাসিমের দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। হাসপাতালে থাকা অবস্থায় গত শুক্রবার সকালে তার ‘ব্রেইন স্ট্রোক’ হলে সেখানেই তার মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করা হয়।

অস্ত্রোপচারের পর নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকা নাসিমের শারীরিক অবস্থা অবনতির দিকে গেলে ১৩ সদস্যের এই মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। নাসিমকে নেওয়া হয় লাইফ সাপোর্টে। এরপর দুই দফা তার করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষায় ফল নেগেটিভ এলেও লাইফ সাপোর্ট থেকে আর তাকে বের করা সম্ভব হয়নি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রটোকল অনুযায়ী কারও কোভিড-১৯ ধরা পড়লে উপসর্গ কমে এলে পর পর দুটি পরীক্ষার ফল ‘নেগেটিভ’ এলে ধরে নেওয়া হয়, তার শরীরে আর ভাইরাসের সংক্রমণ নেই।

১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর কারাগারে নিহত জাতীয় চার নেতার একজন শহীদ এম মনসুর আলীর ছেলে মোহাম্মদ নাসিম পঞ্চমবারের মত সংসদে সিরাজগঞ্জের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছেন।

আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করার পর ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান মোহাম্মদ নাসিম। পরের বছর মার্চে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও তাকে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নাসিম এক সঙ্গে দুই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন ১৯৯৯ সালের ১০ মার্চ পর্যন্ত। পরে মন্ত্রিসভায় রদবদলে তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর দায়িত্ব পান।

২০০৮ সালে নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরলেও সেবার মন্ত্রিসভায় জায়গা হয়নি নাসিমের। তবে পরের মেয়াদে ২০১৪ সালে তাকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী করেন শেখ হাসিনা। এখন মন্ত্রিসভায় না থাকলেও দলীয় কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করে আসছেন নাসিম।

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments