Thursday, April 25, 2024
HomeScrollingচোর অপবাদে রাতভর নির্যাতন, কোদাল দিয়ে কাটা হলো কিশোরের চুল

চোর অপবাদে রাতভর নির্যাতন, কোদাল দিয়ে কাটা হলো কিশোরের চুল

উখিয়ায় গরু চুরির অপবাদে ছৈয়দ আহমদ (১৭) নামে এক কিশোরকে বেঁধে রাতভর অমানুষিক নির্যাতন চালানোর অভিযোগ উঠেছে। গলায় ঝোলানো হয়েছে জুতোর মালা। তাতেই শেষ নয়, কোদাল দিয়ে তার মাথার চুলও উপড়ে ফেলা হয়েছে। অমানবিক দৃশ্যটি উপভোগ করে প্রতিবেশীরা। তারা এর ছবি ও ভিডিও ধারণ করে।

শুক্রবার রাত ১০টার দিকে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার জালিয়া পালং পশ্চিম সোনার পাড়া মোনাফ মার্কেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

শনিবার সকালে ঘটনাস্থল থেকে ওই কিশোরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। ভিকটিম ছৈয়দ আহমদ পশ্চিম সোনার পাড়া এলাকার জাকির হোসেনের ছেলে।

ঘটনায় জড়িত কেউ এখনো আটক হয়নি।

একই এলাকার শামসুল আলমের ছেলে জালাল উদ্দিন (৩৫) এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে। জালাল উদ্দিন মানবপাচারসহ বহু মামলার আসামি বলে জানান তারা।

অভিযুক্ত জালাল আহমদসহ চারজনকে আসামি করে উখিয়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন নির্যাতনের শিকার ছৈয়দ আহমদের বোন জোবাইদা বেগম।

জোবাইদা বেগম জানান, ‘স্থানীয় সামশুল আলমের ছেলে জালাল আহমদ বিনা অপরাধে আমার ভাই সৈয়দ আহমদকে সোনারপাড়া বাজার থেকে ধরে নিয়ে গরু চোরের অভিযোগ এনে ব্যাপক নির্যাতন করে। সারা রাত বাড়ির উঠানে গাছের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে গলায় জুতার মালা পরিয়ে দিয়ে মাথা ন্যাড়া করে দেয়। পরে কোদাল দিয়ে মাথা ন্যাড়া করার নামে মাথায় আঘাত করে। এ ঘটনায় আমার ভাই জ্ঞান হারিয়ে ফেললে সকালে স্থানীয় ইউপি মেম্বার মোহাম্মদ রফিক ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ করেছে।’

জোবাইদা বেগম বলেন, ‘নির্যাতনের শিকার আমার ভাই এখন গুরুতর অসুস্থ। সে উখিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার নাক এবং মুখ দিয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এ কারণে আমি নিজে বাদী হয়ে সুষ্ঠু বিচার চেয়ে অভিযুক্ত জালাল আহমেদসহ চারজনকে আসামি করে উখিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। পুলিশ বিচারের আশ্বাস দিয়েছে’।

ঘটনার প্রসঙ্গে জালিয়া পালং ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার রফিকুল্লাহ জানিয়েছেন, ছৈয়দ আহমদ একজন দোকানদার। মুহাম্মদ নামের এক ব্যক্তির গরু চুরির অভিযোগে তাকে বাজার থেকে ধরে নিয়ে বেঁধে রাখা হয়। খবর পেয়ে নিজে গিয়ে বিস্তারিত খোঁজ নিই। স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তাকে বিষয়টি তাৎক্ষণিক মৌখিকভাবে অবহিত করি।

তিনি জানান, যে গরুটি চুরির অভিযোগ করা হয় সে গরুটি মুহাম্মদের বাড়িতেই ছিল। তবু অপরাধী হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়ে মারধর না করার অনুরোধ জানাই। তারা সেটা শোনেনি। গরুর মালিক মুহাম্মদের ডাকে পাশের বাড়ির বাসিন্দা জালাল উদ্দিন সেখানে গিয়ে উল্টো বিতর্ক করে বসে। তার সঙ্গে যোগ দেয় আরো কয়েকজন। বাগ্‌বিতণ্ডার পর বাড়িতে চলে আসি।

তিনি আরো বলেন, শনিবার সকালে খবর পাই কোদাল দিয়ে ছৈয়দের মাথা মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। রাতভর মারধরসহ অমানুষিক নির্যাতন করেছে তারা। এর একটি ভিডিও হাতে পাই।

এরপর মেম্বার রফিকুল্লাহ গ্রাম পুলিশ (চৌকিদার) জাহাঙ্গীর, আবু সিদ্দিককে সঙ্গে নিয়ে মুহাম্মদের বাড়ি থেকে ছৈয়দ আহমদকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান। ঘটনাটি তিনি থানার ওসিকে জানান।

অভিযুক্ত জালাল উদ্দিন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন।

তিনি বলেন, এলাকায় যাতে আর কোনো সময় গরু চুরির মতো ঘটনা না ঘটে, পুরো এলাকাবাসীকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য এটি করা হয়েছে। তাতে অন্য কোনো উদ্দেশ্য নাই।

এ ব্যাপারে জালিয়া পালং ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চৌধুরী ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে উখিয়া থানার নবাগত ওসি মোহাম্মদ মন্জুর মোরশেদ জানান, ‘আমি সবেমাত্র থানায় যোগদান করেছি। অভিযোগটি আমার কাছে এখনো আসেনি। এ রকম অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে’।

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments