Friday, March 29, 2024
HomeScrollingগলুইয়ের প্রদর্শনী বন্ধ: তারকাদের প্রতিবাদ

গলুইয়ের প্রদর্শনী বন্ধ: তারকাদের প্রতিবাদ

অনলাইন ডেস্ক।

ঈদুল ফিতরে মুক্তি পায় এস এ হক অলিক পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘গলুই’। শাকিব খান ও পূজা চেরি অভিনীত এই সিনেমাটি সারা দেশের ২৮ টি সিনেমা হলে মুক্তি পায়। এদিকে সিনেমাটির শুটিং হয়েছিল জামালপুরের বিভিন্ন এলাকায়। শুটিং দেখতে ভিড় জমিয়েছিলেন লাখো মানুষ। স্বাভাবিকভাবেই সিনেমাটি দেখার জন্য উদ্‌গ্রীব ছিলেন জামালপুরের সিনেমাপ্রেমীরা।

এদিকে জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার আশা সিনেমা হল ব্যতীত অন্য কোথাও কোনো হল না থাকায় ছবিটির পরিচালক এস এ হক অলিক বিভিন্ন অডিটোরিয়ামে ছবিটি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেন। এর মধ্যে ছিল জামালপুর শিল্পকলা একাডেমির নতুন অডিটোরিয়াম, জামালপুরের মাদারগঞ্জে নুরুন্নাহার মাল্টিপারপাস অডিটোরিয়াম ও ইসলামপুরের ফরিদুল হক খান দুলাল অডিটোরিয়াম।

সিনেমাটি দেখতে জামালপুরের সর্বস্তরের মানুষ যখন ভিড় জমাচ্ছিলেন তখনই শোনা গেল অডিটরিয়ামগুলোতে ছবিটির প্রদর্শনী বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছেন জামালপুরের ডিসি মোরশেদা জামান। গত তিন দিন ধরেই বন্ধ রয়েছে ইসলামপুরের ফরিদুল হক খান দুলাল অডিটোরিয়ামে ছবিটির প্রদর্শনী। অপরদিকে মাদারগঞ্জের নুরুন্নাহার মাল্টিপারপাস অডিটোরিয়ামে আজকের পর থেকে আর ছবিটি চলবে না। যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ হয়ে যেতে পারে জামালপুর শিল্পকলা একাডেমি একাডেমির অডিটোরিয়ামের প্রদর্শনীও। শত বছরের পুরোনো একটি আইনের দোহাই দিয়ে এই প্রদর্শনী বন্ধ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

কেন বন্ধ করা হচ্ছে ‘গলুই’য়ের প্রদর্শনী? এ বিষয়ে পরিচালক এস এ হক অলিক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘১৯১৮ সালের একটি পুরোনো আইনের দোহাই দিয়ে জামালপুরের ডিসি সিনেমাটির প্রদর্শনী বন্ধ করে দিচ্ছেন। ওই আইনে আছে, সিনেমা হল ব্যতীত অন্য কোথাও বাণিজ্যিকভাবে সিনেমা প্রদর্শন করা যাবে না। এখন দেখেন একমাত্র মেলান্দহ ছাড়া জামালপুরের আর কোথাও কোনো সিনেমা হল নেই। সিনেমাটি দেখানোর বিকল্প পথ হিসেবে আমরা অডিটরিয়ামগুলোকে বেছে নিয়েছিলাম। যেখানে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত সিনেমা শিল্পকে সহায়তা করতে বলেছেন সেখানে জামালপুরের ডিসির এমন নির্দেশনায় আমরা সত্যিই হতবাক হয়েছি। ডিসির এমন অসহযোগিতা কাম্য নয়।’

এদিকে গলুই সিনেমার প্রদর্শনী বন্ধ হওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠেছে প্রতিবাদের ঝড়। অনেক নির্মাতা, শিল্পী ও কলাকুশলী সামিল হয়েছেন প্রতিবাদে। খ্যাতিমান নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘দেখেন আমাদের এটাই প্রাপ্য। কারো সিনেমা আটকানো হলে আমরা বাকিরা যখন সেটা উপভোগ করি, রসালো গল্প তৈরি করে অনলাইনে ছাড়ি, তখন নানারকম বিধি নিষেধের গিলোটিন আমাদের ওপর নাজিল হবে না কাদের ওপর হবে? আমরা যখন এইসব করে বেড়াবো, ঠিক ঐ অবসরেই আইন করা হবে যে, ডিসি চাইলে এমন কি সেন্সর পাওয়া ছবিও আটকে দেয়া যাবে। বাই দ্য ওয়ে, জামালপুরের সিনেমার প্রদর্শনী কিন্তু কনটেন্টের জন্য বন্ধ করা হয় নাই। করা হইছে সিনেমা হলের বাইরে দর্শনীর বিনিময়ে সিনেমা দেখানোর অপরাধে। কিন্তু ডিসি চাইলে কনটেন্টের জন্যও সিনেমার প্রদর্শনী বন্ধ করতে পারেন, এমনকি সেন্সর হওয়ার পরও। নতুন নীতিমালাতে এটা ছাড়াও আরও ভয়াবহ আইন আছে।’

ফারুকী আরও লিখেছেন, “সুতরাং শিল্পীর স্বাধীনতা বিষয়ে আপনি মনে মনে অনেক কিছু প্রত্যাশা করতে পারেন। বাস্তবে আপনার হাত পা পুরাই বাঁধা! এই বিষয়ে সরকারের সাথে আমরা আমাদের নেগোসিয়েশন যথাযথ করতে পারি নাই। কেনো পারি নাই এটা সবাই নিজেদের প্রশ্ন করলে উত্তর পাইয়া যাবেন। এখন তাই কেবল নির্দোষ প্রেমের গল্প ছাড়া আপনার হাতে বানানোর মতো আর কিছু নাই। সেই নির্দোষ প্রেমের গল্পও অবশ্য ব্যান খাইতে পারে সামাজিক মূল্যবোধে আঘাত করার জন্য। যেরকম আমার ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’ আর ‘ব্যাচেলর’ খাইছিলো কয়েক মাসের জন্য।”

নির্মাতা মোস্তাফিজুর রহমান মানিক লিখেছেন, ‘হল সংকটের এই সময়ে, ‘সিনেমা হল ব্যতীত অন্য কোথাও বাণিজ্যিকভাবে সিনেমা প্রদর্শন করা যাবে না’- এই আইন রহিত করা হোক। জামালপুরের অডিটোরিয়ামগুলোতে, ‘গলুই’ প্রদর্শন বন্ধ করার প্রতিবাদ জানাই।’

নির্মাতা দীপঙ্কর দীপন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অনুদানপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘গলুই’-এর প্রদর্শনী বন্ধ করেছেন জামালপুরের ডিসি মহোদয়! করতেই পারেন সেটা তার নীতিমালার মধ্যে পড়লে। আমার ব্যক্তিগত কথা হলো- ঈদের চলচ্চিত্রগুলো যেখানে এই দুঃসময়ে কাটিয়ে চলচ্চিত্র শিল্প বাঁচানোর চেষ্টা করছে, সেখানে এই সামান্য অজুহাতে (শিল্পকলা একাডেমিতে সিনেমা প্রদর্শনী করা যাবে না) প্রদর্শনী বন্ধ করা উচিত হয়েছে? প্রথমত এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। আমি যতটুকু জানি, শিল্পকলা একাডেমির অনুমতি নিয়েই চলচ্চিত্রটির প্রদর্শনের আয়োজন করেছিল প্রযোজনা সংস্থা। দ্বিতীয়ত শিল্পকলা একাডেমি কার জন্য? বিনোদন শিল্পের সর্বোচ্চ শিল্প যেখানে চলচ্চিত্র সেখানে একটি সরকারি অনুদান পাওয়া সম্পূর্ণ পারিবারিক চলচ্চিত্র ‘গলুই’-এর রানিং শো বন্ধ করে দেয়া কতটা যৌক্তিক? আমার মনে হয় চলচ্চিত্রপ্রেমী সকল মানুষের এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো উচিত।’

নির্মাতা ও অভিনেতা খিজির হায়াত খান লিখেছেন, ‘মাননীয় ডিসি মহোদয় বাংলাদেশকে ১৯১৮ সালের আইনে আটকে না রেখে একটু সময়ের সাথে মুক্ত চিন্তা করতে শিখুন।’

তারা ছাড়াও পরিচালক অপূর্ব রানা, চিত্রনায়ক আদর আজাদ, সহ সিনেমা অঙ্গনের আরও অনেকে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। পাশাপাশি ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপে সাধারণ দর্শক-ভক্তরাও প্রতিবাদের আওয়াজ তুলেছেন।

গ্রামীণ প্রেক্ষাপটে নির্মিত হয়েছে ‘গলুই’। এতে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন অনুষঙ্গ তুলে ধরা হয়েছে। সেই সঙ্গে একটি সহজ-সরল প্রেম কাহিনি। এতে শাকিব অভিনয় করেছেন লালু চরিত্রে, আর পূজা আছেন মালার ভূমিকায়। তাদের সঙ্গে আরও অভিনয় করেছেন আজিজুল হাকিম, সুচরিতা, আলী রাজ, সমু চৌধুরী প্রমুখ। সরকারি অনুদানের পাশাপাশি সিনেমাটির সহ-প্রযোজনায় আছেন খোরশেদ আলম খসরু।

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments