গণসংগীত শিল্পী ফকির আলমগীরের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানিয়েছেন তার ছেলে মাশুক আলমগীর রাজীব। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন রয়েছেন একাত্তরের কণ্ঠযোদ্ধা ও গণসংগীতশিল্পী ফকির আলমগীর।
শনিবার রাত ৮টায় দেশ রূপান্তরকে রাজিব বলেন, ‘বাবা আমাদের সঙ্গে এক ঘণ্টা আগে ভিডিও কলে কথা বলেছেন। চিকিৎসকেরা আমাদেরকে জানিয়েছেন, বাবার শারীরিক অবস্থা এখন স্থিতিশীল। কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে এখনো অক্সিজেন দিতে হচ্ছে।’
শুক্রবার রাত থেকে ফকির আলমগীরের মৃত্যু নিয়ে গুজব ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। বিষয়টি নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে ফকির আলমগীরের পরিবার। গুজব না ছড়ানোর অনুরোধ করেছেন এই শিল্পীর পরিবার।
রাজিব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শুক্রবার রাত ১০টায় আমার চাচি মারা গেছেন। তাকে শনিবার সকালে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। কেউ হয়তো চাচির মৃত্যু খবর জানাতে গিয়ে ফেইসবুকে লিখে দিয়েছে যে ফকির আলমগীর মারা গেছেন। এই গুজবের জন্য আমরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছি। সারা দিন শুধু ফোন রিসিভ করে সবাইকে আপডেট জানাতে হয়েছে। কোনো তথ্য ফেইসবুকে দেওয়ার আগে সবার আরও সতর্ক হওয়া উচিত।’
এর আগে বুধবার ফকির আলমগীরের করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট ‘পজিটিভ’ আসার পর চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে তার জ¦র ও শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকায় রাতে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ফকির আলমগীরের চিকিৎসার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে খোঁজ নেওয়া হয়েছে বলে জানান ফকির আলমগীরের স্ত্রী সুরাইয়া আলমগীর। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ ও বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া ফোন করে খবর নিয়েছেন। এ ছাড়া অনেকেই ফোন করে খবর নিচ্ছেন। সবার কাছে আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। অসংখ্য মানুষ দোয়া করছেন। সবাই যেভাবে খোঁজ নিচ্ছেন, তাতে সাহস পাচ্ছি।’
ষাটের দশক থেকে গণসংগীতের সঙ্গে যুক্ত ফকির আলমগীর। ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী ও গণশিল্পীগোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যোগ দেন স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রে। স্বাধীনতার পর পাশ্চাত্য সংগীতের সঙ্গে দেশজ সুরের মেলবন্ধন ঘটিয়ে বাংলা পপ গানের বিকাশে ভূমিকা রাখেন ৭১ বছর বয়সী এ শিল্পী। সংগীতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য সরকার ১৯৯৯ সালে ফকির আলমগীরকে একুশে পদক দেয়।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তার কণ্ঠের বেশ কয়েকটি গান দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। এর মধ্যে ‘ও সখিনা’ গানটি এখনো মানুষের মুখে মুখে ফেরে। ১৯৮২ সালের বিটিভির আনন্দমেলা অনুষ্ঠানে গানটি প্রচারের পর দর্শকদের মাঝে সাড়া ফেলে। গানটি লিখেছেন আলতাফ আলী হাসু। কণ্ঠ দেওয়ার পাশাপাশি গানটির সুরও করেছেন ফকির আলমগীর।
ফকির আলমগীর সাংস্কৃতিক সংগঠন ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা, গণসংগীত চর্চার আরেক সংগঠন গণসংগীতশিল্পী পরিষদের সাবেক সভাপতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করা ফকির আলমগীর গানের পাশাপাশি নিয়মিত লেখালেখিও করেন। ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও বিজয়ের গান’, ‘গণসংগীতের অতীত ও বর্তমান’, ‘আমার কথা’, ‘যারা আছেন হৃদয় পটে’সহ বেশ কয়েকটি বই প্রকাশ হয়েছে তার।