Saturday, April 20, 2024
HomeScrollingকল রেকর্ড ফাঁসের ঘটনায় গাইবান্ধার সেই ওসি প্রত্যাহার

কল রেকর্ড ফাঁসের ঘটনায় গাইবান্ধার সেই ওসি প্রত্যাহার

গাইবান্ধা প্রতিনিধি |

গাইবান্ধার জুতা ব্যবসায়ী হাসান আলী হত্যা মামলার আসামির এক স্বজনের কাছে ঘুষ লেনদেনের ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনায় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি ও তৎকালীন গাইবান্ধা ডিবি পুলিশের ওসি মো. তৌহিদুজ্জামানকে প্রত্যাহার (ক্লোজড) করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতেই তাকে গাইবান্ধা পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়।

বুধবার সকালে গাইবান্ধার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘তার (ওসি) বিরুদ্ধে রিপোর্ট হয়েছে, তা তদন্ত করার জন্য তাকে ক্লোজড করা হয়েছে।’

গত বছরের ১০ এপ্রিল গাইবান্ধায় আওয়ামী লীগ নেতা মাসুদ রানার বাসা থেকে ব্যবসায়ী হাসান আলীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

এই ঘটনায় মাসুদসহ তিনজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। অপর দুইজন আসামি হচ্ছেন রুমেল হক ও খলিলুর রহমান।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তৎকালীন গাইবান্ধা ডিবি পুলিশের ওসি ও বর্তমানে সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি মো. তৌহিদুজ্জামানের সঙ্গে মামলার এক আসামির এক স্বজনের ঘুষ লেনদেনের ফোনালাপ ফাঁস হয়।

মামলার অভিযোগপত্র থেকে এক আসামির নাম বাদ দেওয়া ও আইনের ধারা কমিয়ে দিতে টাকা লেনদেনের কথাবার্তা হয়। কথামতো কাজ না হওয়ায় টাকা ফেরত প্রদানে ফোনালাপ হয়।

পাঁচ দফায় প্রায় ১৭ মিনিটের ফোনালাপ হয়। এদিকে ফোনালাপটি দেশের বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারিত হয়। এ নিয়ে গত সোমবার থেকে গাইবান্ধায় আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে।

গত বছরের ১০ এপ্রিল গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত উপ-দপ্তর সম্পাদক মাসুদ রানার (৪২) বাসা থেকে ব্যবসায়ী হাসান আলীর (৪৫) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গাইবান্ধা সদর উপজেলার নারায়ণপুর এলাকায় মাসুদ রানার বাসা। মাসুদ রানা দাদন ব্যবসা করতেন। প্রায় দুই বছর আগে মাসুদ রানার কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা ঋণ নেন শহরের স্টেশন রোডের জুতা ব্যবসায়ী হাসান আলী।

এই টাকা সুদাসলে ১৯ লাখে দাঁড়ায়। সুদের টাকা দিতে না পারায় গত বছরের ৬ মার্চ লালমনিরহাট থেকে হাসানকে মোটরসাইকেলে তুলে আনেন মাসুদ। তিনি হাসানকে নিজ বাসায় এক মাসের বেশি আটকে রেখেছিলেন।

এ নিয়ে নিহতের স্ত্রী বিথী বেগম সদর থানায় মাসুদ রানাসহ তিনজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। অপর দুইজন হচ্ছেন শহরের স্টেশন রোডের জুতা ব্যবসায়ী রুমেল হক ও খলিলুর রহমান।

প্রথমে মামলার তদন্ত করেন গাইবান্ধা সদর থানার তৎকালীন পরিদর্শক (অপারেশন) সেরাজুল ইসলাম। পরে গাইবান্ধা ডিবি পুলিশের তৎকালীন ওসি ও বর্তমানে সুন্দরগঞ্জের কঞ্চিবাড়ী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপপরিদর্শক মানষ রঞ্জন দাস দায়িত্ব পান। সর্বশেষ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার দায়িত্ব পান তৎকালীন গাইবান্ধা ডিবি পুলিশের ওসি ও বর্তমানে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি মো. তৌহিদুজ্জামান।

এদিকে ঘটনার বিচারের দাবিতে ব্যবসায়ী ‘হাসান হত্যার প্রতিবাদ মঞ্চ’ গড়ে উঠে। বিচারের দাবিতে দুই মাসব্যাপী আন্দোলন চলে।

আন্দোলনের মুখে সদর থানার তৎকালীন ওসি মাহফুজার রহমান, পরিদর্শক (তদন্ত) মজিবর রহমান এবং উপপরিদর্শক মোশারফ হোসেনকে অন্যত্র বদলি করা হয়। ঘটনার দিনই মাসুদ রানাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি বর্তমানে গাইবান্ধা জেলা কারাগারে রয়েছেন।

ঘটনার নয় মাস ছয়দিন পর মাসুদ ও খলিলুরসহ দুইজনের বিরুদ্ধে চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুজ্জামান আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

১৮ জানুয়ারি তিনি সুন্দরগঞ্জের ওসি হিসেবে বদলি হন। গাইবান্ধা কোর্ট পুলিশ ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে অভিযোগপত্রটি সংশোধনের জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে ফেরত পাঠান। পরে গত ৭ মার্চ মাসুদ রানাসহ তিন আসামিকেই অভিযুক্ত করে আদালতে সংশোধিত অভিযোগপত্র জমা দেন ওসি মো. তৌহিদুজ্জামান।

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments