মহামারি নভেল করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) বিপর্যস্ত গোটা বিশ্ব। চীনে প্রথম পাওয়া যাওয়া এই ভাইরাসটি এখন সরব ইউরোপে। ইউরোপের দেশগুলোতে তাণ্ডব চালাচ্ছে কোভিড-১৯ ভাইরাসটি।
কোভিড-১৯ ভাইরাসে মৃত্যুর দিক দিয়ে আগেই চীনকে পেছনে ফেলেছে ইতালি। এবার চীনকে পেছানো ফেলল ইউরোপের আরেক দেশ স্পেন। গত ২৪ ঘণ্টা স্পেনে নতুন করে মারা গেছে ৭৩৮ জন। যার ফলে দেশটিতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৩ হাজার ৪৩৪ জনে দাঁড়িয়েছে।
স্পেনে বর্তমানে মৃতের সংখ্যা ৩৫০০, যেখানে চিনে মৃতের সংখ্যা বর্তমানে ৩২৮১ জন। ইতালিতে মৃতের সংখ্যা ৭ হাজার অতিক্রম করেছে। এখন পৃথিবীর মধ্যে ইতালির পরে স্পেন মৃতের সংখ্যায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। আজ ২৫ মার্চ একদিনেই এখন পর্যন্ত স্পেনে আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। চরম দিশেহারা হবার পথে স্পেন।
স্পেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার চেয়ে বুধবার স্পেনের আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে ২০গুণ। কোভিড-১৯ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত গোটা বিশ্বে মারা গেছে ১৮ হাজার ৮৩৭ জন। এর মধ্যে ৬ হাজার ৮২০ জন মৃত্যু নিয়ে প্রথম স্থানে রয়েছে ইতালি। আর ৩ হাজার ৪৩৪ জন নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে স্পেন এবং ৩ হাজার ২৮১ জন নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে চীন।
স্পেনের সবচেয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে মাদ্রিদ ও এর আশেপাশের অঞ্চল। দেশটিতে মোট মৃত্যুর এক তৃতীয়াংশ ঘটনা এই অঞ্চলেই ঘটেছে। এছাড়া দেশটির স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রচুর ঝুঁকিতে রয়েছে।
অর্থনৈতিকভাবে ইউরোপের অন্যতম শক্তিশালী দেশ স্পেন এখন কার্যত মৃত্যুপুরী। পর্যটকশূন্য পুরো দেশ। কোথাও নেই কোলাহল। ফার্মেসি ও সুপার মার্কেট ছাড়া সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ।
পুরো দেশ ‘রেড জোন’-এর মধ্যে রয়েছে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে। গত রোববার সরকার সবকিছু বন্ধের সময় বাড়িয়েছে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত। দেশের পুরো কাঠামো ভেঙে পড়ার উপক্রম। অর্থনৈতিক কার্যক্রম অচল হয়ে পড়েছে। এক অনিশ্চিত সংকটের দিকে এগোচ্ছে স্পেন। সবার মতো স্পেন প্রবাসী বাংলাদেশিরাও রয়েছেন আতঙ্কের মধ্যে। পরিসংখ্যান বলছে দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের মধ্যে ১০শতাংশই স্বাস্থ্যকর্মী। রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালক ফেরনান্দো সাইমন বলেছেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে ৩হাজার ৪৭৫ জন স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন।
স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্কটের পাশাপাশি করোনাভাইরাস এর রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতালগুলোতেও রোগীদের জায়গা করে দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। মাদ্রিদের হাসপাতালগুলোতে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) সঙ্কট দেখা দিয়েছে। আইসিইউতে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। যদিও সকল বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে সরকারের অধীনে নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে স্পেনের সবচেয়ে বড় সম্মেলনকেন্দ্র ‘ফেরিয়া দে মাদ্রিদ’এর ইফেমা-কে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় অস্থায়ী হাসপাতাল করে করোনাভাইরাস রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। স্পেনে মারাত্মক স্বাস্থ্যকর্মী সঙ্কটের ফলে সরকার মেডিকেল পড়ুয়া ছাত্রছাত্রী এমনকি অবসরপ্রাপ্ত চিকিতসকদেরও নিয়োগ দিচ্ছে।
দেশটিতে চলমান ১৫ দিনের জরুরি অবস্থা আরও ১৫ দিন বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু কোন কিছুতেই যেন হার মানছে না করোনাভাইরাস। এ মহামারি থেকে কখন মিলবে মুক্তি? এমন প্রশ্ন আর চলমান হতাশার মধ্যেই দিন পার করতে হচ্ছে সবাইকে।