Saturday, April 20, 2024
HomeScrollingঐক্যবদ্ধ হচ্ছে ইসলামি দলগুলো!

ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে ইসলামি দলগুলো!

অনলাইন ডেস্ক।

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো এখন পর্যন্ত ‘একলা চলো’ নীতিতে চলছে। এখনই কোনো জোটে যোগ দেওয়ার চিন্তাভাবনা নেই দলগুলোর। নিজেরা নিজেদের মতো করে চালাচ্ছে কার্যক্রম। নির্বাচনের আগে দলগুলো তাদের সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতেও চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে এরই মধ্যে সব ধর্মভিত্তিক দলকে একই ছাতার নিচে আনতে কাজ শুরু করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।

দলটির পক্ষ থেকে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রাথমিক আলোচনা শুরু হয়েছে। হচ্ছে সৌজন্য সাক্ষাৎও। আর এসবের মাধ্যমে শিগগিরই ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো একটি জোটের অধীনে আসবে বলে আশা করছেন আলোচনাসংশ্লিষ্টরা। গতকাল সোমবার  এসব তথ্য জানিয়েছেন ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর একাধিক শীর্ষ নেতা।

বর্তমানে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে জোর দিচ্ছেন দলটির আমির মুফতি সৈয়দ রেজাউল করিম। দলীয় সরকারের অধীনে হওয়ার কারণ দেখিয়ে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি দলটি। তবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ২৯৯ আসনে প্রার্থী দেয়। যদিও অনিয়মের অভিযোগে নির্বাচনের দিন ভোট বর্জন করে। বর্তমানে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং চা বাগান শ্রমিকদের মজুরি ন্যূনতম ৩০০ টাকা করাসহ বিভিন্ন জনসম্পৃক্ত কর্মসূচিতে মাঠে সরব রয়েছে ইসলামী আন্দোলন।

দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউর রহমান বলেন, ‘এতদিন আমরা জনসম্পৃক্ত কর্মসূচিতে পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করে আসছি। তবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইসলামি দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ একটা প্ল্যাটফর্মে আনার চেষ্টা করছি। একত্রে কাজ করার পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করে যাচ্ছি। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন দলের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে সৌজন্য সাক্ষাৎ করছি, কথা বলছি।’

দেশে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৩৯। এর মধ্যে ধর্মভিত্তিক দল ১০টি। নিবন্ধনের বাইরে ধর্মভিত্তিক দল বা সংগঠন কতগুলো তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ইসলামি দলগুলো হচ্ছেÑ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, জাকের পার্টি এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে রয়েছে খেলাফত মজলিস ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ (একাংশ)। আর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে রয়েছে তরিকত ফেডারেশন। ইসলামী ঐক্যজোট এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস একসময় বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে ছিল। বর্তমানে তারা স্বতন্ত্র অবস্থানে। যদিও এখনো ওই দল দুটির খণ্ডিত একটি অংশ ২০ দলীয় জোটে রয়েছে। বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ও জাকের পার্টিও স্বতন্ত্রভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দীর্ঘদিন বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে ছিল। এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে জোট ছাড়েনি। তবে বর্তমানে দলটি এককভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছে। দলটি বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট থেকে বের হয়ে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছে। আগামীতে যেকোনো সময়ে জোট ছাড়তে পারেন বলে আভাস দিয়েছেন দলটির নেতারা। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামসহ কয়েকটি দলকে নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করলে জামায়াতে ইসলামী নাখোশ হয়। গত রবিবার জামায়াতের আমির মাওলানা শফিকুর রহমানের বক্তব্য সংবলিত একটি ভিডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়ে। তাতে দলটির আমিরকে বলতে শোনা যায় তারা বিএনপির সঙ্গে আর নেই। তবে জামায়াতে ইসলামীর কার্যকরী পরিষদের সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ জানিয়েছেন, তারা ২০ দলীয় জোট ছাড়ার সিদ্ধান্ত এখনো নেননি।

খেলাফত মজলিস দীর্ঘদিন বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক ছিল। গত বছর ১ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলন করে জোট ছাড়ার ঘোষণা দেয় দলটি। এরপর থেকে এককভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে খেলাফত মজলিস কোনো জোটে যোগ দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে কি না জানতে চাইলে দলটির চেয়ারম্যান মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক বলেন, ‘বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট থেকে বের হয়ে আমরা এককভাবে আমাদের দলীয় রাজনীতি করছি। জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি পালন করছি। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আপাতত কোনো জোটে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা আমাদের নেই। সময় হলে এ বিষয়ে ভেবে দেখব।’

ধর্মভিত্তিক দলগুলোর মধ্যে জোট গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী। তিনি  বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনো বাকি দেড় বছর। বর্তমানে আমরা আমাদের দলীয় রাজনীতি করছি। যার যার মতো করে সংগঠন করছি, প্রস্তুতি নিচ্ছি। পরিবেশ পরিস্থিতি অনুকূলে এলে এবং দলগুলোর নেতাদের মধ্যে দূরত্ব কমে এলে জোট গঠনের দিকে যেতে পারি। ইসলামী আন্দোলনের নেতারা আমাদের কার্যালয়ে এসেছিলেন, আমাদের নেতাদের সঙ্গে কথা হয়েছে।’

ইসলামী ঐক্যজোট বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে ছিল। ২০১৬ সালের ৭ জানুয়ারি দলটি বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট থেকে সরে যায়। এরপর তারা স্বতন্ত্রভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছে। কোনো জোটে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কি না জানতে চাইলে ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ গতকাল বলেন, ‘আমরা এখন নিজেদের স্বকীয়তা বজায় রেখে নিজেদের রাজনীতি করছি। সারা দেশে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে কাজ করছি। আপাতত কোনো জোটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিইনি। চিন্তাভাবনা করছি কী করা যায়। শীর্ষ নেতারা প্রাথমিক আলোচনা করছেন বিভিন্ন দলের সঙ্গে।’

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments