Thursday, March 28, 2024
HomeScrollingঈদের দিনের আমল

ঈদের দিনের আমল

ইসলামে ঈদের প্রবর্তন হয়েছে দ্বিতীয় হিজরির মাঝামাঝি সময়ে। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদিনায় আসেন, তখন দেখেন যে সেখানকার লোকরা বছরে দুদিন (নাইরোজ ও মিহরজান) আনন্দ করে, খেলাধুলা করে। তিনি বললেন, আল্লাহতায়ালা তোমাদের এ দুদিনের পরিবর্তে আরও বেশি উত্তম ও কল্যাণকর দুটি দিন দিয়েছেন। ১. ঈদুল আজহা। ২. ঈদুল ফিতর। (আবু দাউদ : ১/১৬১)

‘ঈদ’ শব্দটি আরবি, যার অর্থ আনন্দ। ‘ফিতর’ শব্দটিও আরবি, যার অর্থ রোজা ভাঙা। ঈদুল ফিতরের অর্থ রোজা শেষ হওয়ার আনন্দ, আল্লাহর নেয়ামত লাভ করার আনন্দ। হিজরি সনের দশম মাস তথা শাওয়াল মাসের ১ তারিখ ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়। ঈদের দিনে বিশেষ কিছু আমল রয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগই সুন্নত ও মোস্তাহাব। সেগুলো হলোÑ

১. মেসওয়াক করা সুন্নত। ২. গোসল করা সুন্নত। ৩. সুগন্ধি ব্যবহার করা সুন্নত। ৪. কিছু খেয়ে ঈদগাহে যাওয়া সুন্নত। বিজোড় সংখ্যায় যেকোনো মিষ্টিদ্রব্য খাওয়া উত্তম; খেজুর অতি উত্তম। ৫. ঈদগাহে হেঁটে যাওয়া উত্তম। এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া অন্য রাস্তা দিয়ে আসা মোস্তাহাব। ৬. ঈদগাহে যাওয়ার পথে নিচু স্বরে তাকবির (আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ) পড়া সুন্নত। ৭. সাধ্যমতো উত্তম পোশাক পরিধান করা মোস্তাহাব। ৮. নামাজের জন্য ঈদগাহে যাওয়ার আগে সাদকায়ে ফিতর আদায় করা সুন্নত। (দাতা ও গ্রহীতার সুবিধার্থে রমজানেও প্রদান করা যায়) । ৯. ঈদের দিন চেহারায় খুশির ভাব প্রকাশ করা ও কারও সঙ্গে দেখা হলে হাসিমুখে কথা বলা মোস্তাহাব। ১০. আনন্দ-অভিবাদন বিনিময় করা মোস্তাহাব। (ফাতাওয়া শামি : ১/৫৫৬,৫৫৭,৫৫৮)

আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের জন্য ঈদের দিন সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘ঈদের দিন মহান আল্লাহ ফেরেশতাদের মধ্যে রোজাদারদের নিয়ে গর্ব করে বলেন, হে ফেরেশতারা! আমার কর্তব্যপরায়ণ প্রেমিক বান্দার বিনিময় কী হবে? ফেরেশতারা বলেন, হে প্রভু, পুণ্যরূপে পুরস্কার দান করাই তো তার প্রতিদান। আল্লাহপাক বলেন, আমার বান্দারা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছে। দোয়া করতে করতে ঈদগাহে গমন করেছে। আমার মর্যাদা, আমার সম্মান, দয়া ও বড়ত্বের কসম আমি তাদের দোয়া কবুল করব এবং তাদের মাফ করে দেব।’

ঈদ আল্লাহতায়ালার নেয়ামত বিশেষ। নেয়ামতের চাহিদা হলো এর শোকরিয়া (কৃতজ্ঞতা) আদায় করা। ঈদুল ফিতরের ধর্মীয় করণীয়গুলো পালনের মাধ্যমে নিজেকে ধর্মীয় অনুভূতিসম্পন্ন একজন প্রকৃত মুসলিম হিসেবে গড়ে তোলা এবং সামাজিক করণীয়গুলো পালনের মাধ্যমে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে শান্তি, শৃঙ্খলা, ভ্রাতৃত্ব, সাম্য, সম্প্রীতি, সংহতি ও সহমর্মিতার নজির স্থাপন করা একান্ত কর্তব্য। সহমর্মিতার অন্যতম দিক হলোÑ আত্মীয়স্বজনের খোঁজখবর নেওয়া। কারণ সদাচরণ পাওয়ার দিক দিয়ে আত্মীয়স্বজনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হকদার হলেনÑ মা-বাবা। তারপর পর্যায়ক্রমে অন্য আত্মীয়স্বজন। আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ ও তাদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং সব ধরনের মনোমালিন্য দূর করার জন্য ঈদ বিশাল এক সুযোগ সৃষ্টি করে। এদিকে বিশেষভাবে নজর দেওয়া আবশ্যক।

মনে রাখতে হবে, রমজানের রোজার মাধ্যমে নিজেদের অতীত জীবনের সব পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত হওয়ার অনুভূতি ধারণ করে পরিপূর্ণতা লাভ করে ঈদের খুশি। ঈদ শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়। ধর্মের মূল কাজ হচ্ছেÑ মানুষের মধ্যে জবাবদিহি সৃষ্টি করা। জীবনযাপনে স্বচ্ছতা আনা, ত্যাগী মানসিকতা সৃষ্টি করা, প্রকৃত মানবতার পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করা এবং আল্লাহতায়ালার প্রতিটি সৃষ্টির প্রতি তার নির্দেশিত পন্থায় আচরণ করা। পবিত্র রমজানে যেভাবে পাপমুক্তির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, তার ফলে প্রত্যেক রোজাদার যে পরিশুদ্ধতা অর্জন করেন সে কারণে ঈদ তাদের জন্য বিশেষ আনন্দের সংবাদ দেয়। এটাই ঈদের মূল কথা।

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments