মাদারীপুর প্রতিনিধি।।
আমার বাপ দাদারা এখানে ঘুমিয়ে আছে, আমি আমার সন্তাননেরা এই ঠিকানায় পরিচিত হঠাৎ কে বা কারা সরকারের বিপক্ষে মামলা করলো আমরা জানলামও না। অজানা আতঙ্কে জীবনে কাটছে আমাদের। আমরা জমি থেকে কোথাও যাবো না,যেতেও চাই না, আমরা এই জমিতেই থাকতে চাই এবং মরতে চাই” কান্না জড়িত কন্ঠে এভাবেই আক্ষেপ করে বলছে ৬৫ বছরের আ. রশিদ হাওলাদার নামে এক বৃদ্ধ।
মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের ৪৩ নং মৌজায় পূয়ালী মাদারীপুরে প্রায় আড়াই একরের মত সরকারি খাস জমি রয়েছে যা ঐ এলাকার ভূমিহীনরা প্রায় ৬০বছর আগের থেকে সরকারিভাবে বরাদ্দ (ডিসিআর) নিয়ে দীর্ঘ দিন বসবাস করছে। কিন্তু কিছুদিন আগে গোপালপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসার সরকারি জমি বরাদ্দ নেয়া জমির বসবাসরত মালিকদের জানায় এই জমি এককভাবে মালিকানা করার জন্য এক ব্যাক্তি সরকারকে বিবাদী করে একটি মামলা করেছে অনেকে আগে, যা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। কিন্তু এবিষয় কিছুই জানে না ৭০বছর যাবত দখলে থাকা ও সরকারের কাছ থেকে নিয়মিত বরাদ্দ(ডিসিআর) কেটে বসবাসরত ভূমিহীন মালিকেরা। হঠাৎ জানতে পেরে যেন আকাশ ভেঙে পড়লো মাথায়, কি করবে, কোথায় যাবে, যে জমিতে ঘুমিয়ে আছে দাদার বাবা, বাবার দাদা, বাবা, এই ঠিকানায় পরিচিত, জাতীয় পরিচয় পত্রে এই ঠিকানা। সন্তানরা এই জমিতে বসবাস করে মানুষের মত মানুষ হয়েছে। এই জমিতেই বাড়ীঘর করে বসবাস করছে আর করতে চায়। এই মৌজার সরকারি জমি ডিসিআর কাটা শতাধিক মানুষ। সবুরা বেগম ও মুন্সী আলী হোসেনের ১৪১,১৫০,১৬৮,১৬৯,২৬৫ নং খতিয়ানে ২৬,২৭,৪৫,৪৯,৪৭,১৬,৩৬,৩৭,৩৬,৩৭,৩২,৩৭,৩৬ দাগের ১.৬৫ একর। আ. রশিদ হাওলাদার গং ও সেলিম হাওলাদার গং ১৫৩ ও ১৫৪ নং খতিয়ানের .২৮ একর ভিটা। আ.কাদের মাতুব্বর গং ও মোতালেব হাওলাদার গং ১৮৫ নং খতিয়ানে ৬২ নং দাগে .২২একর বাগান। দলিলদ্দিন মাতুব্বর গং ও মহাম্মদ হাওলাদার গং ১৬৬ নং খতিয়ানে ৬৫নং দাগে .২০ একক বাগান। আ. হক সরদার ২৭১,২৬৬,২৫৯,২৫৮,২৫৪,২৬৫ নং খতিয়ানের ২৩ নং দাগের .২৭ একর পুকুর ও বাগান।
জমির ডিসিআর কাটা মুন্সি আলী হোসেন বলেন, আমার বাবা, আমার দাদাও ডিসিআর কেটে,সরকারকে খাজনা দিয়ে জমিতে বসবাস করে আসছে। আমরাও সরকারিভাবে ডিসিআর কেটে, খাজনা দিয়ে এই জমিতে বসবাস করে আসছি। আগামীতেও সরকারিভাবে সরকারকে খাজনা দিয়ে এই জমিতে বসবাস করতে চাই। যেন কোন ভূমিদস্যু টাকার জোরে এই জমি একক মালিক হতে না পারে।
আ. কাদের মাতুব্বর নামে একজন বলেন, আমার বাব দাদার কবর এখানে আছে। আমার সন্তান ও আমরা এখানে মানুষ হয়েছি। আমরাও এই জমিতে মরতে চাই। সরকার যেন আমাদের তা থেকে বঞ্চিত না করে।
শাহ আলম নামে একজন বলেন, আমি ও আমার প্রায় ৩২ বছর যাবত এখানে বসবাস করছি, আর পাশের জমিও আমি কিনছি। কিন্ত এগুলো বিভিন্ন সমস্যার করানে ডিসি আর কাটা হয় নাই। তবে আমি সরকারের কাছ থেকে বরাদ্দ নিয়ে এই জমি ভোগ করতে চাই।
কালকিনি উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসার মহিউদ্দিন জানান, আদালত গোপালপুর ইউনিয়নের ৪৩নং পূয়ালী মৌজার খতিয়ানের কয়েকটি দাগের তথ্য চেয়েছিল। যেটা সত্য সেটাই দিয়েছি। তবে আমি মনে করি যারা দীর্ঘ দিন সরকারকে খাজনা দিয়ে ভোগ দখলে আছে তাদেরই জমি পাওয়া উচিত।