মাদারীপুরের কালকিনিতে জোড়াতালি দেওয়া এক ভাঙা ব্রিজ দিয়ে গত ১৫ বছর ধরে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে এলাকাবাসী। উপজেলার শিকামঙ্গল ও চরফতেবাহাদুরপুর চৌকিদার বাড়ির পাশের খালের ওপর প্রায় প্রায় ১০০ ফুট লম্বা ওই ভাঙা ব্রিজের ওপর স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশের সাঁকো তৈরি করেছে এলাকাবাসী। তা দিয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করছে। দুই গ্রামবাসীর যাতায়াতের একমাত্র অবলম্বন এই ব্রিজটি নতুন করে নির্মাণ করার জন্য অনেক আবেদন নিবেদন করেও কাজ হয়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ, ব্রিজটি সংস্কারের জন্য দুইবার বরাদ্দ এলেও কোনো কাজ না করে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।স্থানীয়রা জানান, এলাকার কৃষকদের উৎপাদিত ফসল কালকিনি উপজেলা শহর ও মাদারীপুর জেলা শহরে নিয়ে যেতে হলে এই সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। এছাড়া দুই গ্রামের স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজের শিক্ষার্থীদেরও এই বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হয়। সরেজমিনে দেখা গেছে, ভাঙা ব্রিজটির কিছু লোহার বিম ও একটি ইট সিমেন্টের তৈরি পিলার অবশিষ্ট আছে। সেগুলোর সঙ্গে বাঁশ দিয়ে সাঁকো তৈরি করা হয়েছে। বড়রা কোনোভাবে পারাপার হতে পারলেও ছোটদের জন্য পারাপার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।রহমান নামে স্থানীয় এক কৃষক বলেন, ‘গত ১৫ বছর যাবৎ ব্রিজ ছাড়া যে কষ্ট করছি এরকম কষ্ট আগে কখনো করিনি। গরু-ছাগলের জন্য খাবার আনতে গিয়ে মাঝেমধ্যে নিজে পড়ে গিয়েছি। অন্য দিক দিয়ে আসতে গেলে প্রায় আধা কিলোমিটার দূর দিয়ে ঘুরে আসতে হয়। ব্রিজটি নতুন করে করার জন্য অনেক দাবি জানিয়েছি। এখন আর দাবি জানাতে মন চায় না। ’ শিকারমঙ্গল স্কুলের ছাত্রী সোনিয়া জানায়, ‘ভাঙা ব্রিজটি পার হতে গিয়ে একদিন নিচে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছিলাম। চিকিৎসা করতে গিয়ে আমার বাবার অনেক টাকা খরচ হয়েছে। আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে এনেছে। ’চরফতেবাহাদুরপুর গ্রামের কামাল হোসেন বলেন, ‘আমি ব্যবসা করি কালকিনি উপজেলায়। প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে আসা-যাওয়া করতে হয় এই ব্রিজ দিয়ে। তা নাহলে অনেক দূর ঘুরে অন্যের বাড়ির ওপর দিয়ে আসতে হয়। এতে আমার অনেক সময় নষ্ট হয়। ’ শিকারমঙ্গল ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আনিস হাওলাদার বলেন, ‘এলাকার মানুষের স্বেচ্ছাশ্রম ও সহযোগিতায় বছরে দুইবার ব্রিজের ওপর বাঁশের সাঁকো তৈরি করা হয়। জনস্বার্থে অতি দ্রুত এখানে নতুন করে ব্রিজ নির্মাণ করা দরকার। ’শিকারমঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মো. জসিম বলেন, ‘ব্রিজটি পুনর্নির্মাণ করতে অনেক টাকার প্রয়োজন। এটা আমাদের ইউনিয়নের বরাদ্দ দিয়ে সম্ভব না। তাছাড়া আমার জানামতে সেতুটির জন্য কখনো কোনো বরাদ্দও আসেনি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপঙ্কর তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানতাম না। তাছাড়া যে বরাদ্দের কথা আপনারা বলছেন তাতে ঐ ব্রিজের কিছুই হওয়ার কথা না। হয়তো তাই তেমন কাজ হয়নি। এলাকায় খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। ’
Recent Comments
Hello world!
on