Friday, March 29, 2024
HomeScrollingবিদ্বেষ না ছড়িয়ে ভুলগুলো ধরিয়ে দিন: রকমারি

বিদ্বেষ না ছড়িয়ে ভুলগুলো ধরিয়ে দিন: রকমারি

রকমারির ওয়েবসাইটের হোমপেজ থেকে

অনলাইনে বই বিক্রির দেশীয় সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম রকমারি। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিক অভিযোগ উঠেছে। বলা হচ্ছে, ই-কমার্স সাইটটি ‘বিতর্কিত বই’ প্রচার করছে।

রবিবার সকালে ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেজে এ বিষয়ে দীর্ঘ বক্তব্য রেখেছে রকমারি। যেখানে ওয়েবসাইটে ‘বিতর্কিত বই’ প্রদর্শন, প্রতিষ্ঠানটির নীতিমালা ও সর্বাধিক বিক্রীত বইয়ের তালিকাসহ নানা বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়।

‘বিতর্কিত লেখকের বই/ বিতর্কিত বই ওয়েবসাইটে প্রদর্শন’ সম্পর্কে বলা হচ্ছে, “রকমারি ডট কম একটি সেবা ভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আমরা মূলত সারা দেশে বইয়ের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে কাজ করি। আমরা নিজেরা কোন বই প্রকাশ করি না, প্রকাশকদের প্রকাশ করা বই বিপণন করি। যেকোনো বই, যেটা বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ না, সে ধরনের বই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রদর্শন এবং বিক্রি করা হয়। এর বাইরে কোন বইয়ের বিষয়বস্তু যদি রাষ্ট্র ব্যবস্থা, মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-ঐতিহ্য কিংবা কোন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে, সে ধরনের বইগুলো বাদ দিয়ে কাজ করার চেষ্টা করা হয়।

এখানে বলে রাখা ভালো, যেকোনো বই এর কনটেন্টের দায় শুধুমাত্র লেখকের। লেখক-প্রকাশকের ব্যক্তিগত মতাদর্শ কিংবা ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে স্বভাবতই আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। বইয়ের বিষয়বস্তু যদি রাষ্ট্রীয় বিধানের সঙ্গে সংঘাতপূর্ণ হয় অথবা ধর্মীয় বিষয়বস্তুতে আঘাত হানে অথবা কোন লেখক আইন পরিপন্থী কাজে অভিযুক্ত হন, তখন আমরা সেই বই বা সেই লেখকের বইয়ের বিপণন বন্ধ রাখি। সাম্প্রতিক সময়ে যে সব লেখক এ রকম অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন, অভিযোগ পাওয়া মাত্র আমরা তাঁদের বই বিপণন বন্ধ করে দিয়েছি।”

প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বই রিভিউ প্রসঙ্গে বলা হয়, “আমাদের সাইটে প্রকাশকদের নিজস্ব অ্যাকাউন্ট তৈরি করে দেওয়া আছে। যেখান থেকে তারা নিজেরাই সাধারণত বই আপলোড করে থাকেন। রকমারি ডট কমের ওয়েবসাইটে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে ১০ হাজার এর বেশি প্রকাশক এবং ৫০ হাজারের বেশি লেখকের ২ লক্ষাধিক টাইটেলের বই আছে। সব প্রকাশক-লেখক সম্পর্কে একজন একজন করে খোঁজ নিয়ে কিংবা লক্ষ লক্ষ বই নিজেরা পড়ে তারপর আমাদের ওয়েবসাইটে প্রদর্শন কখনোই সম্ভব না।

সে ক্ষেত্রে উপরে উল্লেখিত নীতিমালার অধীনে কোন বই বিষয়ে অভিযোগ চলে আসলে এবং আমাদের অবগত করা হলে আমরা তখন যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে আমাদের ওয়েবসাইটে সেই বই প্রদর্শন বন্ধ রাখি।”

জানানো হয়, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অভিযোগ পেলে দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ প্রতিষ্ঠানটি।

রকমারির নিজস্ব মতাদর্শ নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। এ প্রসঙ্গে বলা হচ্ছে, “রকমারি ডট কমের একটিই আদর্শ, তা হচ্ছে গ্রাহকদের দ্রুততম সময়ে সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করা এবং কোন অর্ডারে কোন ত্রুটি হলে তা যত দ্রুত সম্ভব সমাধান করা। এর বাইরে আমাদের কোন ধরনের কোন রাজনৈতিক কিংবা ধর্মীয় মতাদর্শ নেই।”

রকমারি কেন্দ্রিক বিতর্কের অন্যতম বিষয় হলো বেস্টসেলার তালিকা ও বিজ্ঞাপন নীতিমালা।

এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিষ্কার বক্তব্য, “রকমারি ডট কম বেস্টসেলার বই নির্বাচিত হয় বইয়ের বিক্রি অনুসরণ করে এবং সেটি পুরোপুরি অটোমেটিক এলগরিদমের মাধ্যমে করা হয়। তাই ম্যানুয়ালি কোন পরিবর্তন/পরিমার্জনের সুযোগ নেই। যে বই পাঠকেরা সবচেয়ে বেশি কিনে থাকেন সে অনুযায়ীই রকমারি বেস্টসেলারের ক্রম এবং তালিকা প্রকাশ করা হয়।”

“জনপ্রিয় বিভিন্ন ক্যাটাগরি যেমন উপন্যাস, গল্প, আত্ম উন্নয়ন, ইসলামি, রাজনীতি ইত্যাদি ৫০টির বেশি ক্যাটাগরিতে আমরা আলাদা আলাদা বই এবং লেখকের বেস্টসেলার তালিকা তৈরি করি এবং সবগুলো ক্যাটাগরি মিলিয়ে একটি সাধারণ তালিকাও প্রকাশ করা হয় পাঠকদের চাহিদার ভিত্তিতে।”

আরও বলা হয়, “আমরা মূলত পাঠক চাহিদার ওপর ভিত্তি করেই বিজ্ঞাপন প্রদান করে থাকি যার একটি বড় অংশ থাকে AI (Artificial intelligence) নির্ভর। মূলত ফেসবুক পিক্সেল এবং গুগল ট্র্যাকিং কোডের ওপর নির্ভর করে এই পদ্ধতি কাজ করে। আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিটররা যে বইগুলো ভিজিট করেন পরবর্তীতে সোশ্যাল  মিডিয়াতে এবং বিভিন্ন ওয়েবসাইটে এই পিক্সেলের মাধ্যমে অটোমেটিক সেই বইগুলোর বিজ্ঞাপনই মূলত তারা দেখেন। এর বাইরে বিভিন্ন সময়ে আমরা বিষয়ভিত্তিক প্রচারণা চালাই যেমন কোন বিখ্যাত লেখকের জন্ম/ মৃত্যু দিবসে তাকে নিয়ে আয়োজন, ডিসেম্বরে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বইমেলা, মার্চ এবং আগস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বইমেলা, রমজানে ইসলামি বইমেলা ইত্যাদি। এ ছাড়া প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ মাসে রকমারি বইমেলায় যে সকল বই বেস্ট সেলার হয় সেগুলো নিয়ে সারা বছরই প্রচারণা চালানো হয়।  সুতরাং রকমারি ডট কম সব বইকে এক ক্যাটাগরিতে ফেলে বইয়ের বিজ্ঞাপন প্রদান করে এই ধারণা ভুল এবং অযৌক্তিক।”

রকমারি ডট কমের সার্চ রেজাল্ট নিয়ে আসা অভিযোগ প্রসঙ্গে বলা হয়, “পেয়েছি। সার্চ করার ক্ষেত্রে যেসব বই বেশি বিক্রি হয়েছে সেগুলোতে কিছু প্রায়োরিটি দেওয়া হয়। সার্চ করার ক্ষেত্রে ‘বই’ ও ‘বাংলা’ এ দুটো টার্ম যদি থাকতো তাহলে আমাদের সাম্প্রতিক সময়ের সর্বাধিক বিক্রীত বইগুলো চলে আসতো। এই দুই টার্মের সঙ্গে অন্য যেকোনো টার্ম লিখলেই কাছাকাছি রেজাল্ট আসতো। এই টেকনিক্যাল সমস্যাগুলো আমাদের নজরে আসা মাত্রই সমাধান করে ফেলা হয়েছে।”

প্রচারণা প্রসঙ্গে রকমারি বলছে, “চাইলেও সকল লেখক, সকল প্রকাশকের বই নিয়ে প্রচারণা চালানো সম্ভব হয় না। বিক্রির পরিমাণ, লেখকের পরিচিতি এই বিষয়গুলো না চাইলেও আমাদের বিজ্ঞাপনী খরচ ঠিক করার সময় মাথায় রাখতে হয়।”

অভিযোগকারীদের উদ্দেশে বলা হয়, “ফলে সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে, যাদের বই বিক্রির পরিমাণ সন্তোষজনক নয় তাদের বই নিয়ে কার্যক্রম কম হলে তখন তারা রকমারির প্রতি বিভিন্ন অভিযোগ এনে প্রতিনিয়ত সোশ্যাল মিডিয়াতে নেতিবাচক বক্তব্য প্রদান করেন। সাম্প্রতিক সময়ে রকমারি বিষয়ে একের পর এক অভিযোগ নিয়ে আলোচনায় তাই নির্দিষ্ট কয়েকজন ব্যক্তির ভূমিকাই প্রতীয়মান হচ্ছে।”

“আমরা বলতে চাই, বিদ্বেষ না ছড়িয়ে ভুলগুলো ধরিয়ে দিন। যে কোনো সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠান নিয়েই সমালোচনা হয়, কারণ প্রতিদিন হাজার হাজার গ্রাহক নিয়ে কাজ করতে গেলে ভুল হওয়াটাই স্বাভাবিক। যেকোনো গঠনমূলক সমালোচনাকে আমরা আন্তরিকভাবে গ্রহণ করি। অন্যদিকে ঘৃণার সংস্কৃতি লালন করে আদতে কারোই লাভ হচ্ছে না। বিগত প্রায় এক দশক ধরে রকমারি বাংলাদেশের প্রতিটি প্রান্তে বই পৌঁছে দিয়েছে। হাজার হাজার মানুষ বই হাতে পেয়েছে রকমারির মাধ্যমে। বিদেশে বসেই অনেকে পেয়েছেন বাংলা বইয়ের স্বাদ। উঠতি হাজারো লেখক-প্রকাশকদের ভরসার জায়গা হয়েছে রকমারি।”

ক্রমাগত বিদ্বেষ ছড়িয়ে ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করলে রকমারি একা না, দেশের কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বরং বিদ্বেষ না ছড়িয়ে কীভাবে বইয়ের পাঠক তৈরি করা যায় এ নিয়ে একসঙ্গে কাজ করলে সামগ্রিকভাবে লাভবান হবে সবাই— এ বক্তব্য রকমারির।

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments