মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই নিশ্চিত করেছে যে, রবিবার তারা ওয়াইমিং জাতীয় উদ্যানের ভেতরে নিখোঁজ ‘ভ্যান লাইফ’ ব্লগার গ্যাবি পেটিটো-র লাশ খুঁজে পেয়েছেন।
একজন মৃতদেহ পরীক্ষক প্রাথমিকভাবে জানিয়েছেন যে, তাকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু কিভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে সে সম্পর্কে কিছু বলেননি।
এফবিআই-এর ডেনভার অফিস টুইট করে বলেছে, ‘টেটন কাউন্টির মৃতদেহ পরীক্ষক ডা. ব্রেন্ট ব্লু নিশ্চিত করেছেন যে, ওয়াইমিং জাতীয় উদ্যানে পাওয়া মৃতদেহের অবশিষ্টাংশগুলো গ্যাব্রিয়েল ভেনোরা পেটিটো-র।
গ্যাবি পেটিটো (২২) তার বাগদত্তা প্রেমিক ব্রায়ান লন্ড্রি (২৩) এর সঙ্গে গ্র্যান্ড টেটন জাতীয় উদ্যান পরিদর্শন করতে এসেছিলেন।
গত ০১ সেপ্টেম্বর ব্রায়ান লন্ড্রি তাদের সাদা ভ্যান নিয়ে একা ফ্লোরিডায় ফিরে আসার আগে এই যুগল কয়েক সপ্তাহ ধরে ভ্রমণ করছিলেন। ফেরার পর তিনি পুলিশ বা পেটিটো পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেননি।
মিসেস পেটিটো এর পরিবার ১০ দিন পরে তার নিখোঁজ হওয়ার খবর দেয় পুলিশে। এরপর ১৪ সেপ্টেম্বর তার প্রেমিক ব্রায়ান লন্ড্রি বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়।
নিউইয়র্কের মেয়ে গাব্রিয়েলা যাকে সবাই গ্যাবি হিসাবে চেনে। বয়স মাত্র বাইশ ছাড়িয়েছে। তার ছেলেবেলার বন্ধু ব্রায়ান লন্ড্রি। দুজন দুজনের প্রেমে হাবুডুবু দীর্ঘকাল ধরে। পারিবারিকভাবেও তাদের সম্পর্ক স্বীকৃত। ভ্রমন পিয়াসু গ্যাবি গত মাসে তার ছেলে বন্ধুর সাথে ক্রস কান্ট্রি ট্যুরে বের হন একটা ভ্যান গাড়ি নিয়ে। এক রাজ্য পেরিয়ে এক রাজ্য এভাবে তারা ভ্রমণ করছিলো আমেরিকার বুক চিরে। ভ্রমণের চিত্র এবং বর্ণনা ছাপাচ্ছিলো ইনস্টাগ্রামে। এবং গ্যাবি তার ব্লগেও এই ভ্রমণের গল্প লিখে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।
ঘন্টায় ঘন্টায় গ্যাবি তার মায়ের সাথে যোগাযোগ রেখে চলছিল মেসেজ আদানপ্রদান করে। সবই ঠিকঠাক চলছিল।
মধুরতম সম্পর্কেও ঝগড়া বিবাদ হয়, এটা স্বাভাবিক ঘটনা। এই তরুণ যুগলের ভিতর একদিন ঝগড়া বাধলো। তারা তখন ইউটাহ রাজ্যের সল্টলেইক সিটিতে গাড়ির ভেতরে। রাস্তার পাশে গাড়ি দাঁড়ানো। ভেতরে তাদের হাতাহাতি, চিৎকার শুনে এক পথচারী পুলিশে ফোন করলো। পুলিশ এসে তাদের ঝগড়ার কারণ জানতে চাইলো। বুঝলো তাদের সম্পর্ক অনেক গভীর। তাই ঝামেলা না বাড়িয়ে মিটমাট করে দিয়ে দুজনকে সাময়িকভাবে ২/১ দিন আলাদা থাকতে বলল। গ্যাবি গাড়িতে ঘুমালো আর ব্রায়ান গেলো হোটেলে।
এভাবেই চলছিল। তবে গ্যাবি তার মাকে শেষ যে মেসেজ পাঠালো তা তার মায়ের কাছে খুব অদ্ভুত লাগলো। মেসেজটা ছিল এমন – নানার প্রতি খেয়াল রেখো। অদ্ভুত লেগেছে কারণ নানা বেঁচে নাই। এরপর আর কোন মেসেজ আসে নাই গ্যাবির। যোগাযোগ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়।
এক পর্যায়ে তার প্রেমিক ব্রায়ান লন্ড্রি একা তার ফ্লোরিডার বাসায় ফিরে যায়। কিন্তু গ্যাবি সঙ্গে নেই। কয়েকদিন অপেক্ষা করে গ্যাবির মা-বাবা পুলিশের শরণাপন্ন হন। পুলিশ গ্যাবিকে খুঁজতে শুরু করে। অবশেষে গত রবিবার ওয়াইওমিং রাজ্যের ন্যাশনাল পার্কে এক নারীর বিকৃত মৃতদেহ খুঁজে পায়।
এদিকে ব্রায়ান বিনা নোটিশে বাসা ছেড়ে পালিয়েছে। তাকে খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ। সন্দেহের তালিকায় সে প্রথম ব্যক্তি। অনেক রাজ্য জুড়ে ঘটনার পরিধি হওয়ায় কেইসটা চলে যায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের হাতে। তারা আলামত সংগ্রহ শুরু করে।
তার পরিবার জানিয়েছে ব্রায়ান পালিয়েছে নর্থ পোর্টে তার বাড়ির কাছের ফ্লোরিডার দুর্গম বনাঞ্চলে যেখানে কুমির-অজগরের অবাধভূমি। তাই বলে তাকে নিস্তার দেওয়া হয় নাই। অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে এফবিআইর স্পেশাল টিম।
এছাড়া লন্ড্রিকে দেখা গেছে এমন সব জায়গাও তল্লাশি চলছে, যার মধ্যে ফ্লোরিডার পশ্চিমে সীমান্তে আলাবামা থেকেও তাকে দেখা যাওয়ার ব্যাপারে এক ডজনেরও বেশি খবর এসেছে।
সোমবার গোয়ান্দারা লন্ড্রি পরিবারের বাড়িতেও তল্লাশি চালায়। গোয়ান্দাদের তখন ঘর থেকে বেশ কয়েকটি বাক্স সরিয়ে একটি রূপালী ফোর্ড মাসটাং টেনে নিতে দেখা যায়।
এই ঘটনা পুরো আমেরিকার জনসাধারণের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে। এই ঘটনার প্রতিটি নতুন খবর টিকটক, ইনস্টাগ্রাম এবং টুইটারের মতো প্ল্যাটফর্মে ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের মতে, মঙ্গলবার পর্যন্ত হ্যাশট্যাগ #GabbyPetito শুধুমাত্র টিকটকে ৬৫ কোটির বেশি ভিউ পেয়েছে।