Thursday, April 25, 2024
HomeScrollingকেউ পেটের দায়ে, কেউ অহেতুক বের হচ্ছে রাস্তায়, গ্রেপ্তার ১১০২

কেউ পেটের দায়ে, কেউ অহেতুক বের হচ্ছে রাস্তায়, গ্রেপ্তার ১১০২

অনলাইন ডেস্ক।। 

করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে কঠোর বিধিনিষেধের সপ্তম দিন অপ্রয়োজনে রাস্তায় বের হওয়া ১১০২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এদিন রাজধানীর অনেক রাস্তায় ছিল যানবাহনের আধিক্য। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে রিকশা।

বুধবার ডিএমপির আটটি ডিভিশনের ৫০ টি থানা এলাকার বিভিন্ন চেকপোস্টে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

কথা বলে জানা যায়, কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে যারা রাস্তায় বের হয়েছেন তাদের কেউ পেটের দায়ে আবার কেউ তুচ্ছ কারণে নিষেধ অমান্য করে ঘরের বাইরে এসেছেন। তবে রাস্তায় বের হওয়াদের পড়তে হয়েছে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের মুখে। কোনো কোনো রাস্তায় চেক পোস্টের কারণে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।

রাজধানীর বাংলামোটর, শাহবাগ, মৎস্য ভবন, নিউমার্কেট, মগবাজার, মৌচাকে প্রচুর রিকশা ও প্রাইভেটকার দেখা যায়। এতে ওই সব এলাকার পুলিশি চেকপোস্টে যানজট দেখা দেয়। রাস্তায় যানবাহনের চাপে চেকপোস্টে জিজ্ঞাসাবাদে করতে হিমশিম খেতে হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে যারা রাস্তায় বের হয়েছেন তাদের কোনো না কোনো জরুরি কাজের অজুহাত আছে।

ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, বুধবার ‘বিনা কারণে’ রাস্তায় বের হওয়া ১১০২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার লকডাউনের ৬ষ্ঠ দিনে গ্রেপ্তারের সংখ্যা ছিল ৪৬৭।

বুধবার ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ২৪৫ জনকে ১ লাখ ৭১ হাজার ৯৮০ টাকা জরিমানা করেছে। মঙ্গলবার ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৩০৫ জনকে ২ লাখ ২৭ হাজার ৪৮০ টাকা জরিমানা করা হয়।

বুধবার  ট্রাফিক বিভাগ ৪৮০ টি গাড়িকে ১৮ লাখ ৬৮ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করেছে। গত মঙ্গলবার ট্রাফিক বিভাগ ১ হাজার ৮৭টি গাড়িকে ২৫ লাখ ২৯ হাজার ২৫ টাকা জরিমানা করে।

এদিকে অন্য দিনের মতো পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনী সড়কে টহল দিয়েছে। যারা রাস্তায় বের হয়েছেন তাদের বেশির ভাগই ব্যাংক ও হাসপাতালে যাওয়ার কথা বলছেন। কেউ বলছেন ঘরে খাবার নেই, ধার দেনা করতে বের হয়েছেন। আবার কেউ ফুলের টবের মতো জিনিস কিনতেও ঘর থেকে বের হয়েছেন। মূল সড়কের পাশাপাশি বিভিন্ন অলিগলিতে ও দোকানপাটে অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশি খুলতে দেখা গেছে। বিশেষ করে মূল সড়কের পাশের দোকানও অর্ধেক সাটার খুলে কেনা বেচা করতে দেখা গেছে।

সকাল ১১ টার দিকে রাজধানীর শাহবাগ থানার সামনে থেকে আইইবি (রমনা পার্ক গেট) চেকপোস্ট মোড় পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটার রাস্তায় ছিল দীর্ঘ যানজট। শাহবাগ থানার এসআই দিপক রিকশা ও অন্যান্য যানবাহন থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছিলেন। বেলা ১১টা ৩৫ মিনিটে রিকশায় থাকা প্রদীপ নামের এক ব্যক্তিকে পুলিশ রাস্তায় বের হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফুলের টব কিনতে বের হয়েছেন। এ সময় তাকে রিকশা থেকে নামিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। আরেক রিকশায় থাকা দুজনকে জিজ্ঞাসা করলে তারা বলেন, বাসায় খাবার না থাকায় গুলিস্তানে বসের কাছে যাচ্ছেন টাকা আনতে। বসকে ফোন দিতে বলার পর বসের ফোন বন্ধ পায় পুলিশ।

চেকপোস্টে দায়িত্ব পালককারী পুলিশের কর্মকর্তারা বলেন, ২০ ভাগ মানুষ কোনো জরুরি প্রয়োজন ছাড়াই বের হয়েছে। এদের জন্য প্রয়োজনের বের হওয়া মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে।

রাজধানীর প্রগতি সরণিতে রাস্তায় বের হওয়া জাহিদুল ইসলাম বলেন, কিছু কিছু অফিস ছাড়া অন্যগুলো খোলা আছে, তাহলে তো সড়কে মানুষ বের হবেই, লকডাউন একেবারে কঠোর হলে সবকিছুই বন্ধ করে দিতে হবে। আমাদের অফিস খোলা, না গেলে কি চাকরি থাকবে? তাহলে আমাদের মতো মানুষদের তো বের হতেই হবে। এখন যেহেতু অফিস যেতে হবে তাই কেউ হেঁটে যাচ্ছে, কেউ রিকশায় যাচ্ছে। এছাড়া কর্মজীবী মানুষও বের হয়েছে কাজের আশায়।

গত কয়েক দিন দেখা না গেলেও বুধবার রাস্তায় দেখা মিলছে দুই একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশাও। এমন এক সিএনজিচালক মোহম্মাদ রহমতুল্লাহ।

তিনি বলেন, কয়দিন আর ঘরে বসে থাকব? বাইরে বের হলে ট্রাফিক পুলিশের মামলা-হয়রানি, তবুও জীবিকার তাগিদে ঝুঁকি নিয়ে বের হয়েছেন বেশ কজন চালক। ঘরে খাবার নেই, যে কারণে বাধ্য হয়ে আমাদের বের হতে হয়েছে। লকডাউনেও অনেক অফিস, কর্মক্ষেত্র খোলা আছে তাই সকালে রাস্তায় মানুষের প্রচুর উপস্থিতি। তারা গণপরিবহনের জন্য হাহাকার করছেন। স্বল্প দূরত্ব হলে রিকশায় যেতে পারছেন, কিন্তু যাদের অফিস বা কর্মক্ষেত্র দূরে অথবা জরুরি প্রয়োজনে কিছুটা দূরত্বে যেতে হবে, সে ক্ষেত্রে মানুষ কী করবে। এদিকে আমাদেরও ঘরে খাবার নেই, তাই বাধ্য হয়েই বের হয়েছি।

রাজধানীর রামপুরা এলাকায় রিকশাচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রথম দুই-তিন দিন লকডাউনের কার্যকারিতা ছিল সড়কে। এরপর থেকে মানুষ কাজে বের হচ্ছে। প্রথম দুই-তিন দিন তো তেমন ট্রিপই পাইনি। এরপর থেকে ট্রিপ পাচ্ছি ভালোই। আজ সকাল থেকে বৃষ্টি, তবুও মানুষের উপস্থিতি কম নেই।

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments