কুমিল্লা সংবাদদাতাঃ
গত বছরের ৯ ডিসেম্বর কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই সময়ে শুধুমাত্র সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়। সম্মেলনের দীর্ঘ এক বছর অপেক্ষার পর গত মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) অনুমোদন হয় ৭৫ সদস্য বিশিষ্ট কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী পূর্ণাঙ্গ কমিটি। এতে বিএনপি ও জাতীয় পাটি থেকে আগতদের স্থান দেওয়া হয়েছে আর ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যনের অভিযোগ করা হয়েছে। তবে এ কমিটি ঘোষণার পর থেকেই শুরু হয়েছে আন্দোলন মানববন্দন বিতকের ঝড়। ত্যাগীদের নতুন কমিটিরতে অন্তভুক্তি করার দাবীতে আজ রোববার দাউদকান্দি উপজেলা আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের উদ্যোগে ঢাকা চট্রগ্রাম মহাসড়কে মানববন্দন ও বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া কমিটিতে ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন করার অভিযোগ রয়েছে। কুমিল্লার উত্তরের ৭টি উপজেলা নিয়ে রাজনৈতিক কুমিল্লা উত্তর জেলা গঠিত।
দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের অভিযোগ, বিএনপি থেকে আগত তানবির আহমেদ, চান্দিনায় উপজেলা দীর্ঘ দিন বিএনপি রাজনীিেত সাথে জড়িত ছিলেন। সে আওয়ামীলীগের কোন সদস্য পদ নেই অথচ জেলা কমিটির ৩২ নং সদস্য করা হয়েছে। আওয়ামীলীগের জেলার নেতার নাম ভাঙ্গিয়ে চাকুরীদেওয়া নামে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া অভিযোগ রয়েছে। কবির হোসেন নামে এক লোক থেকে চাকুরী দেওয়ার নামে চার লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে ভুক্ত কবির হোসেন বলেন, আমাকে সরকারী চাকুরী দেওয়ার কথা জেলা আওয়ামীলীগের নেতা তানবির আহমেদ চার লাখ টাকা নিয়েছে। আমাকে চাকুরীও দেয়না আবার টাকাও ফেরত দিচ্ছে না।
বর্তমান কমিটির সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং চান্দিনা উপজেরা আওয়ামীলীগের সভাপতি মুনতাকিম আশরাফ টিটু বলেন, চান্দিনা থেকে তানবির আহমে কে জেলা কমিটির ৩২নং সদস্য করা হয়েছে। সে কখনো ইউনিয়ন বা থানা কমিটির সদস্যও ছিল না। পুরো কমিটিতে বৈষম্য করা হয়েছে। নতুন কমিটিতে এমন অনেকে আছেন যারা ইউনিয়ন বা থানা কমিটিতেও নেই।
দলীয় সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার ঘোষিত ওই কমিটির পদ সংখ্যা ৩৯টি আর সদস্য পদ ৩৬টি। অনুমোদিত ওই কমিটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মোট ৩৯টি গুরুত্বপ‚র্ণ পদের মধ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উপজেলায় পদ পেয়েছেন ২৩ জন নেতা। এর মধ্যে সাধারণ সম্পাদক রৌশন আলী মাস্টারের নিজ উপজেলা দেরিদ্বার থেকে পদ পেয়েছেন সর্বোচ্চ ১৪ জন। ওই উপজেলায় সদস্য পদ পেয়েছেন আরও ৪জন। আর সভাপতি মু.রুহুল আমিনের নিজ উপজেলা মুরাদনগরে পদ পেয়েছেন ৯জন। এছাড়া ওই উপজেলায় সদস্য পদ পেয়েছেন আরও ৯জন। এদিকে কুমিল্লা উত্তর জেলার রাজনৈতিক সদর কেন্দ্র চান্দিনা উপজেলায় হলেও এই উপজেলায় ৩৯টি গুরুত্বপূর্ণ পদের মধ্যে পদ পেয়েছেন মাত্র ৩ জন। গত জেলা কমিটিতে থাকা সাংগঠনিক সম্পাদক, ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সালাম, দপ্তর সম্পাদক আবুল হাসেম সরকার, সদস্য মামুন চেয়ারম্যান, মহসিন ভুইয়াসহ , সাংবাদিক হাবিবুর রমান হাবিব, আবদুল আঊয়াল মাস্টার, অমূূল্য চন্দ্র বণিক, অনেক ত্যাগী নেতাদেও নতুন কমিটিতে স্থান পায়নি।
গত কমিটির দপ্তর সম্পাদক আবুল হাসেম সরকার বলেন, আমি ১৮ বছর দাউদকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলাম, চার বছর ছিলাম ভারপ্রাপ্ত। অথচ এই পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে আমার ঠাঁই হয়নি। যারা জেলা কমিটির সভাপতি-সম্পাদক হয়েছে তারা থানা কমিটিরও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেননি। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে টাকার বিনিময়ে অযোগ্য লোকদের রাখা হয়েছে। অনেক ছাত্রলীগ-যুবলীগের ছেলেরা পদ পেলেও বাদ পড়েছেন দলের সিনিয়র ত্যাগী নেতারা।
হোমনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও গত জেলা কমিটির কোষাদক্ষ্য শাহ আলম খন্দকার বলেন, আমার মতো অসংখ্য ত্যাগী নেতাকর্মীরা কমিটিতে নেই। আমাদের হোমনা জেলার গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা হলেও এখানে এমপিসহ মাাত্র ৫ জনকে সদস্য রাখা হয়েছে। কাউকে পদ দেওয়া হয়নি। যারা তদবির করতে পারে তারাই গেছে কমিটিতে। আমরাতো তেল মেরে আর তদবির করে রাজনীতি করতে পারবো না। আর এখন রাজনীতিও নেই। পুরো কমিটির বেশিরভাগই দুই উপজেলার লোক। কমিটিতে ত্যাগীদের অবমূল্যায়নের পাশাপাশি চরম বৈষম্য করা হয়েছে।
কুমিল্লা জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রৌশন আলী মাস্টার আলাপকালে তিনি বলেন, যারা কমিটিতে এসেছে তাদের সকলের বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থা খোঁজখবর নিয়েছে, তদন্ত করেছে। এখানে বিতর্কিত কেউ এসে থাকলে আমাদেও করার কিছু নেই। আমি ও সভাপতি সাহেব উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক সেই এলাকার নেতাদেও নাম দিয়েছেন। কারণ রাজনীতি করতে লোক লাগে। এটা কোন অন্যায় না। আর কমিটি ঘোষণা হয়ে গেছে, এটা নিয়ে এখন কোন বিতর্ক হতে পারে না। আমাদের সিনিয়র নেতারা এসব নিয়ে কথা বলবেন।
LN/Arif
Leave a Reply