‘আর কে বলবে বলো/তোমার মতন করে- সাবধানে বাবা বাড়ি ফিরো/কাউকে বলিনি আমি কোনোদিন মুখ ফুটে/আসলে তুমি আমার হিরো’— অনুপম রায়ের কণ্ঠে গাওয়া এ গানটি বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার রিলস আর শর্টসে বেশ জনপ্রিয়। বাবাকে সঙ্গে নিয়ে গানের দুই কলির সঙ্গে ঠোঁট মেলাচ্ছেন সেলিব্রেটি থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। বলা যায়, বাবার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের মাধ্যম হয়ে উঠেছে গানের কলি দুটি।
যে মানুষটিকে কখনো ভালোবাসার কথা মুখে ফুটে বলা হয় না তিনি বাবা। জীবন নামক তপ্ত মরুতে যিনি বটবৃক্ষের মতো ছায়া বিলান। বাবাকে ভালোবাসার জন্য নির্দিষ্ট দিনক্ষণের প্রয়োজন নেই- এ কথা সত্য। তবুও একটা দিন যদি কেবল তার প্রতি ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা প্রকাশের জন্য নির্ধারণ করা যায় তাহলে মন্দ কি! তাই তো প্রতি বছর জুন মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্বজুড়ে পালিত হয় ‘বাবা দিবস’। ক্যালেন্ডারের হিসাবে এবার দিনটি পালিত হচ্ছে ১৮ জুন।
সন্তানদের একটু ভালো রাখতে যে মানুষটি প্রতিনিয়ত সয়ে যান সব দুঃখ-কষ্ট তিনিই বাবা। বাবাদের কাঁধ বোধহয় অনেকখানি চওড়া হয়। না হয় তাতে সংসারের বোঝা কী করে বহন করেন তিনি?
বাবার সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক অনেক সন্তানেরই হয় না। কিছুটা ভারী স্বভাবের বাবা থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকাই ভালো মনে করেন তারা। অথচ সেই ‘ভারীর’ আড়ালে উঁকি দিলেই দেখা যায় ত্যাগের পাহাড়। নিজের কষ্টের কথা সন্তানের কাছ থেকে আড়াল করে রাখেন তিনি। তাই হয়তো অদৃশ্য দেয়ালে ঢাকা পড়ে বাবার ভালোবাসার গভীরতা।
বিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে শুরু হয় বাবা দিবস পালনের রীতি। মায়েদের পাশাপাশি বাবারাও যে তাদের সন্তানের প্রতি দায়িত্বশীল- এটা বোঝানোর জন্যই দিবসটি সূচনা। পৃথিবীর সব বাবার প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা প্রকাশের ইচ্ছা থেকেই যে দিবসের জন্ম।
ইতিহাস অনুযায়ী, ১৯০৮ সালের ৫ জুলাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জেনিয়ার ফেয়ারমন্ট এলাকার এক গির্জায় প্রথম ‘বাবা দিবস’ পালিত হয়। আবার, ১৯০৯ সালে সনোরা স্মার্ট ডড নামের ওয়াশিংটনের এক ভদ্রমহিলার মাথাতেও বাবা দিবসের ভাবনা আসে। ভার্জিনিয়ার বাবা দিবসের কথা একেবারেই জানতেন না তিনি। ডডের এই ভাবনার জন্ম হয় গির্জার এক পুরোহিতের বক্তব্য থেকে। সেই পুরোহিত মাকে নিয়ে অনেক ভালো ভালো কথা বলছিলেন। ডড আবার ছিলেন বাবা ভক্ত কন্যা। তার কাছে মনে হলো, বাবাদের জন্যও কিছু করা দরকার। এরপর সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগেই পরের বছর ১৯১০ সালের ১৯ জুন থেকে বাবা দিবস পালন করা শুরু করেন।
তবে জানলে অবাক হবেন, দিবসটি নিয়ে মানুষ মোটেও উৎসাহিত ছিলেন না। বরং তাদের কাছে বিষয়টি ছিল হাস্যকর। ধীরে ধীরে অবস্থা বদলায়। ১৯১৩ সালে আমেরিকান সংসদে বাবা দিবসকে ছুটির দিন ঘোষণা করার জন্য একটা বিল উত্থাপন করা হয়। ১৯২৪ সালে তৎকালীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ক্যালভিন কুলিজ বিলটিতে পূর্ণ সমর্থন দেন। ১৯৬৬ সালে প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসন বাবা দিবসকে ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন। সেই থেকে বর্তমানে বিশ্বের ৫২টি দেশে বাবা দিবস পালিত হয়ে আসছে।
নিজেকে অনেকটা অগোচরে রাখতে ভালোবাসেন, তার প্রিয় খাবার কিংবা প্রিয় মুহূর্তের কথা জানা যায় না সহজে। প্রিয় রঙের পোশাক কোনটি সেটিও আবিষ্কার করা সম্ভব হয় না। শার্টের ছেঁড়া বোতাম হাসিমুখে লাগিয়ে ফেলেন যে মানুষটি তিনি বাবা। তাই বলে কিন্তু সন্তানদের নতুন পোশাক কেনায় কোনো ভাটা তিনি পড়তে দেন না।
আদর-শাসন আর বিশ্বস্ততার আধার হলেন বাবা। সন্তানদের সবসময় নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে থাকেন তিনি। সন্তানের উচিত বাবাকে সবসময় ভালোবাসা, শ্রদ্ধা করা। জীবনের প্রথম সুপারহিরো যেন শেষজীবনে এসেও সুপার থাকেন- তা নিশ্চিত করাই সন্তানের কর্তব্য।
লাইভস্টাইল ডেস্ক।।
Leave a Reply